পাকিস্তানের হিম্মত! ২৪৬ ভারতীয় বছরের পর বছর ধরে বন্দি আল্টিমেটাম দিল ভারত সরকার!

পাকিস্তানের হিম্মত! ২৪৬ ভারতীয় বছরের পর বছর ধরে বন্দি আল্টিমেটাম দিল ভারত সরকার!

যখন দুটি দেশ যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে একে অপরকে শত্রু চোখে দেখে, তখন যদি খবর আসে যে শত্রুর জেলে আপনার দেশের ২৪৬ জন নাগরিক বন্দি, তাহলে কি আপনি শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন? ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কে আবারও সেই পরিচিত চিত্র সামনে এসেছে – বন্দিদের তালিকা, যা প্রতি বছর দু’বার আদান-প্রদান করা হয়। কিন্তু এবারের তালিকায় যা প্রকাশ পেয়েছে, তা শুধু কূটনৈতিক মহলেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেনি, বরং সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের হৃদয়ে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গও জ্বালিয়ে দিয়েছে।

২৪৬ জন ভারতীয় পাকিস্তানের জেলে পচে মরছে, কিন্তু কেন? ভারত সরকার একটি চমকপ্রদ তথ্য শেয়ার করেছে – বর্তমানে পাকিস্তানের জেলে ২৪৬ জন ভারতীয় নাগরিক বন্দি আছেন, যার মধ্যে ৫৩ জন সাধারণ নাগরিক এবং ১৯৩ জন জেলে। এদের মধ্যে অনেকেই তাদের সাজা শেষ করেছেন। অনেকেই আইনি সহায়তাও পাননি। আর কিছুজনের জন্য তো জেলের চার দেয়ালই এখন তাদের ‘ঘর’ হয়ে উঠেছে! ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০০৮ সালে ‘দূতাবাস প্রবেশ চুক্তি’ হয়েছিল। এর অধীনে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি এবং ১ জুলাই উভয় দেশ একে অপরকে তাদের জেলে থাকা অন্য দেশের নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ‘কাগজের আদান-প্রদান’ আর কতদিন চলবে? ভারত বারবার বলেছে যে মানবিক বিষয়গুলিকে রাজনৈতিক শত্রুতার ঊর্ধ্বে রাখা উচিত, কিন্তু পাকিস্তান প্রতিবারই হয় চোখ বন্ধ করে থাকে নয়তো কানে তালা লাগিয়ে রাখে।

১৫৯ ভারতীয়র সাজা শেষ তবুও কেন জেলে?
ভারত সরকার এবার অত্যন্ত কড়া ভাষায় পাকিস্তানকে বলেছে যে, যে ১৫৯ জন ভারতীয়ের সাজা শেষ হয়ে গেছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। সরকার আরও জানিয়েছে যে পাকিস্তান এখনও ২৬ জন বন্দিকে কনস্যুলার অ্যাক্সেস অর্থাৎ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের অনুমতি দিচ্ছে না। আইন অনুযায়ী, যখন কোনো বিদেশী নাগরিক অন্য কোনো দেশের জেলে থাকে, তখন তার দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের সম্পূর্ণ অধিকার থাকে। কিন্তু পাকিস্তান শুধু এই অধিকার লঙ্ঘনই করছে না, বরং এটিকে একটি কৌশলগত অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করছে।

ভারত দেখিয়েছে মানবতা পাকিস্তান কবে শিখবে?
ভারত সরকার জানিয়েছে যে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ২,৬৬১ জন জেলে এবং ৭১ জন সাধারণ নাগরিক ভারতে ফিরে এসেছেন। শুধুমাত্র ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫০০ জন জেলে এবং ১৩ জন নাগরিককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ, ভারত সব সময় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে রয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান? এখন ভারতের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।

বন্দিদের যন্ত্রণা
ভাবুন তো, একজন গরিব জেলের ছেলে ভুল করে সীমান্ত অতিক্রম করল, আর তাকে সেখানে গুপ্তচর ভেবে ধরে নেওয়া হলো। ভাবুন, একজন মানসিক অসুস্থ ব্যক্তির গাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে গেল, আর তাকে জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে ফেলে দেওয়া হলো। এমন কত ভারতীয় পাকিস্তানের জেলে বিনা দোষে বছরের পর বছর ধরে পচে মরছে। এটা শুধু কূটনীতির কথা নয়, এটা মানবতার প্রশ্ন।

ভারতের কঠোর হুঁশিয়ারি এবার আর নয়!
বিদেশ মন্ত্রক পাকিস্তানকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে – “আপনারা যাদেরকে বিনা কারণে আটকে রেখেছেন, তাদের মুক্তি দিন। যাদের এখনও কনস্যুলার অ্যাক্সেস দেওয়া হয়নি, তাদের অবিলম্বে দেখা করার অনুমতি দিন। এবং যতক্ষণ না এটি হচ্ছে, ততক্ষণ তাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপনাদের।” ভারত আরও জানিয়েছে যে তারা ৮০ জন পাকিস্তানি বন্দির নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য ফর্ম পাঠিয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান এখনও জবাব দিচ্ছে না। অর্থাৎ, আবারও – পাকিস্তানের ‘ঢিলেমি নীতি’ এবং ‘রাজনৈতিক চাল’ মানবতার উপর ভারী পড়ছে।

প্রতি বছর তালিকা এলে কিছু নাম যোগ হয়, কিছু বাদ পড়ে। কিন্তু যা পরিবর্তন হয় না, তা হলো – এই বন্দিদের চোখে আশা, পরিবারের চোখে অশ্রু এবং দুই দেশের জেলের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত নীরবতা।

এখন সময় এসেছে… সংখ্যার নয়, ন্যায়ের কথা বলার! সরকারগুলোর মধ্যে যত শত্রুতা থাকুক না কেন, সেইসব নির্দোষ বন্দিদের কেন সাজা দেওয়া হবে যারা শুধু সময় এবং সীমান্তের খেলায় ফেঁসে গেছে? ভারত তার বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে – “এখন আর চোখে ধুলো দেওয়া যাবে না। পাকিস্তানকে যে কোনো মূল্যে ন্যায়বিচার দিতেই হবে।” এবং এখন প্রশ্ন হলো – পাকিস্তান কি তার ‘সন্ত্রাস ও চালবাজি’র মুখোশ ছেড়ে মানবতার পথ অবলম্বন করবে? নাকি প্রতি বছর বন্দিদের এই তালিকা এভাবেই একটি কালো দলিল হয়ে আসতে থাকবে… আর জীবন এই নির্বাকদের কাছ থেকে নীরবে কেড়ে নেওয়া হবে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *