আদানির কাছে ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার মেটাল বাংলাদেশ বাকি পাওনা সুদসমেত শোধ!

বাংলাদেশ অবশেষে আদানির সঙ্গে তাদের পুরনো সমস্যাগুলোর সমাধান করেছে। গত মাসে, অর্থাৎ জুন মাসে, বাংলাদেশ আদানির পাওনা বাবদ ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা) পরিশোধ করেছে। এই অর্থ দিয়ে পুরোনো বকেয়া এবং তার সুদও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী উৎস হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সময়মতো অর্থ পরিশোধ করছে। এর পাশাপাশি, দুই মাসের বিলের সমপরিমাণ লেটার অফ ক্রেডিট (LC) এবং সমস্ত বকেয়া অর্থের জন্য গ্যারান্টিও দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো আদানি পাওয়ারের জন্য বড় স্বস্তি এনেছে। গত ৩-৪ মাস ধরে বাংলাদেশ প্রতি মাসে ৯০-১০০ মিলিয়ন ডলার (৭৫০-৮৫০ কোটি টাকা) পরিশোধ করছিল। এরপর জুনে ৪৩৭ মিলিয়ন ডলারের এককালীন পরিশোধের মাধ্যমে সমস্ত দেনা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুত সরবরাহ পুনরায় শুরু
আদানি পাওয়ারের সাথে পেমেন্টের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলার পর বাংলাদেশ এখন কো ম্পা নিকে তাদের দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু করতে বলেছে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (BPDB) এর সময়সূচী অনুযায়ী এখন দেশটি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ পাবে। আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত ১৬০০ মেগাওয়াটের একটি বিশেষ প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যদিও এটি বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদার ১০% পূরণ করে। BPDB এর তথ্য অনুযায়ী, এই বিদ্যুৎ সবচেয়ে সস্তা এবং নির্ভরযোগ্য।
পেমেন্ট সংক্রান্ত সমস্যা
আগে বাংলাদেশ ২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধে সমস্যা ভোগ করছিল। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দেয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দেয়, কিন্তু মার্চ ২০২৫-এ, যখন বাংলাদেশ বকেয়া কমানো শুরু করে, তখন পূর্ণ সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়। জুলাই ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রতি মাসে অর্থ পরিশোধ করছিল এবং এখন সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
ক্রেডিট রেটিংয়ে উন্নতি
বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালের চুক্তিটি পরীক্ষা করেছিল, কিন্তু এতে কোনো ভুল খুঁজে পায়নি। এরপর আদানির সহযোগী কো ম্পা নিকে মূল কো ম্পা নির সাথে একত্রিত করা হয়, যার ফলে কাজ এবং অর্থের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হয়। এখন ব্যাংকগুলো আদানি পাওয়ারের ক্রেডিট রেটিং AA থেকে AA+ এ উন্নীত করার কথা ভাবছে, যার ফলে তারা সস্তায় ঋণ পাবে।
২৫ বছর মেয়াদী চুক্তি
আদানির গোড্ডা প্ল্যান্ট ২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশকে ১০০% কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য তৈরি হয়েছিল। আগে অর্থ পরিশোধ না হওয়ায় সরবরাহ অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এখন সবকিছু ঠিক আছে। এই প্ল্যান্টটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সাথে ভালোভাবে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
বিদ্যুৎ, কয়লা এবং তেলের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য বাংলাদেশের ডলারের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ছাত্রদের বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গিয়েছিল। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকার IMF থেকে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছিল, যা তাদের পূর্বের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজের অতিরিক্ত। এর ফলে গ্রামীণ অঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়ে গিয়েছিল।
অন্যান্য ভারতীয় কো ম্পা নিগুলোর সংযোগ
আদানি ছাড়াও, NTPC লিমিটেড এবং PTC ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর মতো ভারতীয় সরকারি কো ম্পা নিগুলোও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। শেখ হাসিনার আমলে অনেক চুক্তি হয়েছিল, যেগুলোকে নতুন সরকার স্বচ্ছতার অভাব বলে অভিহিত করেছিল, কিন্তু এখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে।