ভারতকে সমরাস্ত্রের অর্ডার দিচ্ছে ব্রাজিল! চীনের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ভারতের শক্তিশালী সামরিক প্রযুক্তির কথা এখন বিশ্বজুড়ে শোনা যাচ্ছে এবং এতে চীনের কপালে ভাঁজ পড়া নিশ্চিত। ব্রাজিল ভারতের অত্যাধুনিক আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং গরুড় আর্টিলারি গানে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে, এবং এখন একটি বড় চুক্তির প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কেবল ভারত-ব্রাজিল সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে না, বরং চীনের বৈশ্বিক আধিপত্যকেও সরাসরি চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
মজার বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী সপ্তাহে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিলে যাচ্ছেন এবং এর আগেই দুই দেশের মধ্যে সামরিক বোঝাপড়ার ইঙ্গিত আন্তর্জাতিক কৌশলগত মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা
ভারত এবং ব্রাজিলের মধ্যে এখন শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত সম্পর্কও শক্তিশালী হচ্ছে। উভয় দেশ এখন যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং সামরিক প্রশিক্ষণ-এর মতো ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) পি. কুমারান নিশ্চিত করেছেন যে ব্রাজিলের সাথে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব নিয়ে সক্রিয় আলোচনা চলছে। কুমারানের মতে, ব্রাজিলের আগ্রহ কেবল আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং গরুড় কামানগুলিতেই নয়, বরং তারা ভারতের সহায়তায় নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা, অফশোর পেট্রোল ভেসেল (OPV), স্করপেন সাবমেরিনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থাতেও আগ্রহ দেখাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ভারতের দাপট
ব্রাজিল ভারতের সাথে যৌথ প্রতিরক্ষা উদ্যোগ (Joint Ventures) স্থাপনে আগ্রহী। ব্রাজিলের বিশ্বখ্যাত এয়ারোস্পেস কো ম্পা নি এমব্রেয়ার-এর সাথে সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি ভারতের জন্য কেবল প্রতিরক্ষা রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ হবে না, বরং বৈশ্বিক সামরিক উৎপাদন নেটওয়ার্কে অংশীদারিত্বের পথও খুলে দিতে পারে।
আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র
আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম DRDO দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি মাঝারি পাল্লার সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা ২৫-৪৫ কিমি এবং উচ্চতায় আঘাত হানার ক্ষমতা ২০ কিমি পর্যন্ত। মাক ২.৫ গতিতে চলমান এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বিমান হামলা মোকাবেলা করতে সক্ষম। এটি অপারেশন সিন্দুর-এও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যেখানে এটি পাকিস্তান দ্বারা চালানো ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছিল।
গরুড় আর্টিলারি গান
গরুড় আর্টিলারি সিস্টেম একটি অত্যাধুনিক দেশীয় কামান, যা বিশেষভাবে উপকূলীয় অঞ্চল এবং দ্রুত মোতায়েন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর মারক ক্ষমতা এবং গতিশীলতা এটিকে সীমান্ত অঞ্চলের জন্য আদর্শ করে তোলে।
চীনের উদ্বেগ বৃদ্ধি
ভারত-ব্রাজিল প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্ভাবনায় চীনের উদ্বেগ বাড়া নিশ্চিত। চীন নিজেই একটি বড় অস্ত্র রপ্তানিকারক এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে লাতিন আমেরিকা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করার চেষ্টা করে আসছে। ব্রাজিলের মতো দেশের ভারতের প্রতি ঝোঁক চীনের বাজার অংশীদারিত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে।
এছাড়াও, যেহেতু ব্রাজিল এবং ভারত উভয়ই ব্রিকস-এর সদস্য, তাই এই ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোটের মধ্যে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে তুলে ধরে। এর ফলে ভারত একটি অর্থনৈতিক অংশীদারের চেয়েও বেশি একটি কৌশলগত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বিশ্বব্যাপী পরিচিতি
এই পুরো ঘটনাটি ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের সাফল্যকে তুলে ধরে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা পণ্যগুলির বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ব্রাজিলের মতো একটি প্রধান দেশের ভারতীয় প্রযুক্তিতে আগ্রহ এটিই প্রমাণ করে যে ভারত এখন শুধু ভোক্তা নয়, বরং একটি বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা সরবরাহকারী (Global Supplier) হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।