বিস্ফোরকের ছায়ায় ‘হরমুজ’! ভারত-চীনের তেলপথ বন্ধ করতে চাইছে ইরান, সামনে এল ভয়ঙ্কর সত্য

বিস্ফোরকের ছায়ায় ‘হরমুজ’! ভারত-চীনের তেলপথ বন্ধ করতে চাইছে ইরান, সামনে এল ভয়ঙ্কর সত্য

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মতে, ইরান বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল তেল পরিবহণের পথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলার পর এবং ২২ জুন আমেরিকার পাল্টা জবাবের সময়, ইরানকে তাদের নৌবাহিনীর মাইনগুলি জাহাজে লোড করতে দেখা গেছে।

এই পথকে বিশ্বের শক্তির লাইফলাইন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এখানে যেকোনো ধরনের বাধা তৈরি হলে তা বিশ্ব বাজারে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

বিস্ফোরকের ছায়ায় ‘হরমুজ’

হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগর এবং আরব সাগরকে সংযুক্তকারী ৩৪ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি জলপথ। এই পথ দিয়ে সৌদি আরব, ইরাক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং ইরানের মতো দেশগুলির অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস বিশ্বজুড়ে পৌঁছায়। বিশ্বের প্রায় ২০% অপরিশোধিত তেল প্রতিদিন এই পথ দিয়ে যায়, যার কারণে এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিবেদন অনুসারে, ইরান তাদের যুদ্ধজাহাজগুলিতে জলর নিচে স্থাপনযোগ্য মাইন লোড করেছিল। এই মাইনগুলি এখনও সরাসরি সমুদ্রে ছাড়া হয়নি, তবে আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলি এই পদক্ষেপকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

ইরানের উদ্দেশ্য: যুদ্ধ না মানসিক চাপ?

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মতে, ইরান দুটি কারণে এই পদক্ষেপগুলি নিয়েছে:

১. হরমুজ বন্ধ করার প্রত্যক্ষ প্রস্তুতি

২. আমেরিকা ও মিত্র দেশগুলির উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা

২২ জুন ইরানের সংসদ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল, যা এই সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তবে, এই সিদ্ধান্তের জন্য সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রয়োজন, যা এখনও পাওয়া যায়নি। ইরান এর আগেও বহুবার এ ধরনের হুমকি দিয়েছে, তবে সেগুলি প্রধানত রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল।

ক্রেডিট: সোশ্যাল মিডিয়া

আমেরিকার প্রস্তুতি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সতর্কতা

যদিও হরমুজ প্রণালী বর্তমানে খোলা আছে এবং তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, তবে আমেরিকা এবং তার নৌবাহিনী সতর্ক আছে। বাহরাইনে মোতায়েন থাকা ইউএস ফিফথ ফ্লিট এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য দায়ী এবং ইরানের গতিবিধির উপর নিবিড় নজর রাখছে। সম্প্রতি ইরানে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রগুলিতে হামলার কারণে উত্তেজনা বেড়েছিল। এর ফলে আমেরিকা তাদের মাইন-বিরোধী জাহাজগুলিকে সাময়িকভাবে সরিয়ে নিয়েছিল, যাতে সম্ভাব্য ইরানি হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

বৈশ্বিক জ্বালানি সুরক্ষার উপর ঝুলছে বিপদ

যদি ইরান হরমুজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহের উপর বড় চাপ সৃষ্টি হবে। তেলের দাম দ্রুত বাড়বে এবং ভারত, চীন সহ অনেক দেশের অর্থনীতিতে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ভারত ও চীনের মতো তেল আমদানিকারক দেশগুলি এই পথের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। তাই ইরান কর্তৃক এমন পদক্ষেপের ফলে এই দেশগুলিকে বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

একটি গুরুতর নিরাপত্তা সতর্কতা

হরমুজে ইরান মাইন লোড করেছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দাবি একটি গুরুতর নিরাপত্তা সতর্কতা। যদিও এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে, তবে উত্তেজনার মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির এখন শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি, অন্যথায় একটি ভুল পদক্ষেপও বিশ্বকে নতুন জ্বালানি সংকটের গভীরে ঠেলে দিতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *