অপহরণের পর থানায় গণধর্ষণ! দগ্ধ পুলিশ উর্দি, ন্যায় বিচার কি পাবে নাবালিকা?

উত্তর প্রদেশের বদায়ুঁ জেলা থেকে সম্প্রতি এক জঘন্য ঘটনা সামনে এসেছে, যা পুলিশের উর্দিকে কলঙ্কিত করেছে। কাদারচৌকের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর অপহরণ এবং পরবর্তীতে থানায় তাকে গণধর্ষণের অভিযোগ শুধু স্থানীয়দেরই নয়, পুরো সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা পুলিশের জবাবদিহি এবং নৈতিকতার ওপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। নির্যাতিতা ম্যাজিস্ট্রেট-এর সামনে নিজের বয়ানে একজন পুলিশ উপ-পরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন, যা এই ঘটনাকে আরও চাঞ্চল্যকর করে তুলেছে। এই ঘটনা শুধু আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতিই নয়, সমাজে দুর্বল শ্রেণীর নিরাপত্তা কতটা চ্যালেঞ্জিং, তাও দেখিয়ে দিয়েছে।
অপহরণ থেকে থানা পর্যন্ত এক ভয়ঙ্কর কাহিনি
এই মর্মান্তিক ঘটনা ৯ জুন শুরু হয়েছিল, যখন কাদারচৌকের একটি গ্রাম থেকে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অপহরণ করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মুজাক্কির নামে এক ব্যক্তি মেয়েটিকে অপহরণ করে তামিলনাড়ুতে নিয়ে গিয়েছিল। অভিযোগ, নির্যাতিতার ঠাকুমা নাকি তাকে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন, যা এই মামলাকে আরও জটিল করে তোলে। পরিবারের সদস্যরা ১০ জুন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ২১ জুন তামিলনাড়ু থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে। ২৩ জুন তাকে ট্রেনে করে বদায়ুঁতে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে এটি একটি সফল পুলিশ অভিযান মনে হলেও, এরপর যা ঘটল তা সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
২৭ জুন নির্যাতিতা মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে যে জবানবন্দি দেয়, তা লোমহর্ষক। সে অভিযোগ করে যে, বদায়ুঁতে আনার পর কাদারচৌক থানার উপ-পরিদর্শক হরিওম তাকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। কিশোরী জানায় যে, ২৩ জুন সন্ধ্যা ৭টায় থানায় পৌঁছানোর পর হরিওম তাকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, সে মেয়েটিকে হুমকি দেয় যে, যদি সে কাউকে এই কথা জানায়, তবে তাকে মেরে ফেলা হবে। ভয়ে কিশোরী প্রথমে চুপ করে থাকলেও, পরে সে তার মাকে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানায়। এই ঘটনা পুলিশ মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
এই বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। উঝানির পুলিশ সার্কেল অফিসার (সিও) দেবেন্দ্র সিং বলেছেন যে, কিশোরীকে ২৩ জুন দুপুর ৩:৩৭ মিনিটে থানায় আনা হয়েছিল এবং সেদিনই সন্ধ্যা ৪:৪১ মিনিটে তাকে ওয়ান স্টপ সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে তার মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়, যা তিন দিন ধরে চলে। সিও-র মতে, নির্যাতিতা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এও বলেছে যে, অপহরণকারী মুজাক্কির তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেছে এবং এসআই হরিওম ট্রেনে তার সঙ্গে শ্লীলতাহানি করেছে। পুলিশ এই মামলাকে শ্লীলতাহানির ঘটনা বললেও, নির্যাতিতার ধর্ষণের অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সিনিয়র পুলিশ সুপার ব্রিজেশ সিং বলেছেন যে, এই ঘটনার গভীর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে, অভিযুক্ত এসআই হরিওমকে ২৮ জুন কাদারচৌক থানা থেকে শাহজাহানপুরে বদলি করা হয়েছে।