ভারতের এই রহস্যময় নাগ মন্দিরে ভয়ে কাঁপেন সবাই! নেপথ্যের কারণ জানলে আপনারও গা ছমছম করবে!

ভারতের এই রহস্যময় নাগ মন্দিরে ভয়ে কাঁপেন সবাই! নেপথ্যের কারণ জানলে আপনারও গা ছমছম করবে!

ভারতে নাগ পূজা এক পৌরাণিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য। নাগ পঞ্চমীর মতো উৎসবগুলো এই বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু দেশে এমন কিছু নাগ মন্দির আছে, যেগুলোর সঙ্গে জড়িত গল্পগুলো শ্রদ্ধার চেয়েও বেশি ভয় তৈরি করে। মানুষ সেখানে যেতে চাইলেও, পা বাড়ানোর আগে দু’বার ভাবে। আসুন জেনে নিই ভারতের ৫টি সবচেয়ে রহস্যময় এবং ভয়ংকর নাগ মন্দির সম্পর্কে, যেখানে আজও ভয়, রহস্য এবং আস্থার এক অদ্ভুত মিলন রয়েছে।

রহস্য, ভীতি ও আস্থার অভূতপূর্ব মেলবন্ধন
১. ভূতেশ্বর মহাদেব নাগ মন্দির, ঝাঁসি (উত্তরপ্রদেশ)
উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি জেলায় অবস্থিত ভূতেশ্বর মহাদেব মন্দিরকে ‘নাগদের অভিশপ্ত মন্দির’ বলা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, রাতে এখানে কেউ থাকে না, কারণ রাতের বেলায় নাগদেবতা তার মূর্তির চারপাশে ঘোরাফেরা করেন। মন্দিরের পুরোহিতরাও সূর্যাস্তের আগেই পূজা শেষ করেন। গ্রামবাসীরা দাবি করেন যে, যারা রাতে সেখানে থাকার চেষ্টা করেছেন, তারা হয় অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন অথবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নাগপঞ্চমীর দিনে এই মন্দিরে হাজার হাজার মানুষ আসেন, কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই নীরবতা নেমে আসে।

২. নাগচণ্ডী দেবী মন্দির, ভোজপুর (বিহার)
ভোজপুর জেলায় অবস্থিত নাগচণ্ডী দেবী মন্দির শুধু দেবীর শক্তির জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানকার রহস্যময় নাগদের জন্যও পরিচিত। এখানে একটি গুহা আছে, যেখানে প্রাকৃতিক নাগের আকারের আকৃতি তৈরি হয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করে যে, এখানে আজও নাগদেবতা সজীব রূপে উপস্থিত আছেন এবং কেউ যদি তাদের এলাকায় অনধিকার প্রবেশ করে, তাহলে তার ক্ষতি হতে পারে। অনেক গ্রামবাসী বলেন যে, তারা রাতে এখানে ফোঁসফোঁস করার শব্দ শুনেছেন।

৩. নাগ দেবতা মন্দির, বাসুকীনাথ (ঝাড়খণ্ড)
বাসুকীনাথের শিব মন্দির বিখ্যাত হলেও, এখানকার নাগদেবতা মন্দিরও সমান রহস্যময়। বলা হয় যে, এখানকার নাগদেবতার মূর্তি কখনও কখনও নিজে থেকেই জ্বলজ্বল করে ওঠে। গ্রামবাসীরা এটিকে দৈব ইঙ্গিত বলে মনে করেন। এছাড়াও, এখানে প্রতি বছর নাগ পঞ্চমীতে একটি বিশেষ আবর্তন হয়, যেখানে শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পরিবার অংশ নেয়, অন্যদের দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

৪. নাগবল মন্দির, শ্রীনগর (জম্মু-কাশ্মীর)
ডাল লেকের কাছে অবস্থিত নাগবল মন্দিরকে ‘নাগিনীর ঘর’ বলা হয়। কাশ্মীরের লোককথা অনুযায়ী, এই মন্দিরটি নাগরাজ তক্ষকের রানীর বাসস্থান ছিল। আজও মন্দিরের কাছে অবস্থিত কুণ্ডে একটি বিশাল নাগ দেখা যাওয়ার ঘটনা স্থানীয়দের দ্বারা জানানো হয়। মন্দিরের পরিবেশ খুবই রহস্যময় থাকে এবং কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাস এটিকে আরও ভীতিকর করে তোলে। এই মন্দিরের ভিতরে কিছু নির্দিষ্ট সময়েই মানুষ যায়, বাকি সময় এটি বন্ধই থাকে।

৫. কালিয়া নাগ মন্দির, কোড়াইকানাল (তামিলনাড়ু)
তামিলনাড়ুর কোড়াইকানাল বনের ভিতরে অবস্থিত এই মন্দিরটি একেবারেই আলাদা। এখানে কোনো মূর্তি নেই, বরং একটি বিশাল কালো পাথরকে নাগের রূপ মনে করা হয়। বনের মধ্যে এই মন্দিরে পৌঁছানোও সহজ নয়। বলা হয় যে, এটি সেই স্থান যেখানে শ্রীকৃষ্ণ কালিয়া নাগকে পরাস্ত করেছিলেন। স্থানীয় উপজাতিরা এটিকে অত্যন্ত পবিত্র এবং বিপজ্জনক স্থান মনে করে। এখানে যাওয়ার আগে বিশেষ পূজা এবং অনুমতি জরুরি বলে মনে করা হয়।

এই মন্দিরগুলোর সঙ্গে জড়িত গল্প এবং ঘটনা শুধু কিংবদন্তি নয়, বরং প্রজন্ম ধরে চলে আসা বিশ্বাস। এই স্থানগুলো শুধু নাগদের শক্তিই নয়, বরং আমাদের এটাও মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতি, দেব-দেবী এবং আত্মার জগতের মধ্যে এমন একটি ক্ষেত্রও আছে, যা বিজ্ঞান এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। আজও এই মন্দিরগুলোতে মানুষ ভয় এবং শ্রদ্ধা উভয় নিয়ে আসে। কেউ মানত পূরণ করতে আসে তো কেউ জীবনের ভয় থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু একটি কথা সবাই বিশ্বাস করে—নাগদেবতার অপমান করা উচিত নয়, অন্যথায় তার ফল খুব গুরুতর হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *