‘তাহলে ভারত আমাদের মেরে ফেলবে!’ পাকিস্তানি জনতার ক্ষোভ এবং ২০২৫ সালের যুদ্ধবিরতিতে আমেরিকার ভূমিকা

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও শিরোনামে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর খবরের জেরে। ‘তাহলে ভারত আমাদের মেরে ফেলবে!’—এই উক্তিটি এসেছে পাকিস্তানি জনগণের মুখ থেকে, এবং এর পেছনে রয়েছে ২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি এবং এতে আমেরিকার কথিত ভূমিকা। পাকিস্তানি ইউটিউবার শোয়েব চৌধুরী সম্প্রতি রাস্তায় নেমে জনগণের মতামত জানতে চেয়েছেন, এবং যে উত্তরগুলো পাওয়া গেছে, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো! পাকিস্তানে চলমান মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, এবং এখন ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক—কেন এই বিপুল ক্ষোভ? চলুন, শুরু থেকে এই গল্পটি জেনে নেওয়া যাক।
যুদ্ধবিরতি এবং আমেরিকার মধ্যস্থতা: পাকিস্তানি জনগণের ক্ষোভের কারণ
পাকিস্তানি ইউটিউবার শোয়েব চৌধুরী তার ইউটিউব চ্যানেল ‘দ্য পাকিস্তানি’-তে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইছেন যে তারা ২০২৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি এবং এতে আমেরিকার ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন। ভিডিওতে একজন ব্যক্তি চিৎকার করে বলছেন, “তাহলে ভারত আমাদের মেরে ফেলবে!” কিন্তু এই ক্ষোভ কোথা থেকে আসছে? আর আমেরিকার প্রতি এত অসন্তোষ কেন?
সম্প্রতি খবর এসেছে যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আবারও যুদ্ধবিরতির কথা চলছে। আর এবার মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে আমেরিকা। ২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তির প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু এই খবর পাকিস্তানের জনগণের পছন্দ হয়নি। শোয়েব চৌধুরীর সর্বশেষ ভিডিওতে লোকেরা এই যুদ্ধবিরতি এবং আমেরিকার মধ্যস্থতা সম্পর্কে তাদের মতামত জানিয়েছেন। একজন ব্যক্তি বলেছেন, “আমেরিকা আমাদের বিক্রি করে দিচ্ছে, আর ভারত আমাদের মেরে ফেলবে!” এই ক্ষোভের উৎস কোথায়? চলুন, বিষয়টি আরও গভীরভাবে বোঝা যাক।
শোয়েব চৌধুরীর ভিডিওতে মানুষজন খোলাখুলি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। একজন ব্যক্তি বলেছেন, “আমেরিকা সবসময় ভারতের পক্ষ নেয়। তারা আমাদের দুর্বল করতে চায়, আর ভারত সুযোগ পেলে আমাদের শেষ করে দেবে!” অন্য একজন চিৎকার করে বলেছেন, “আমাদের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ, মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে, আর এখন এই যুদ্ধবিরতির কথা? এটা সবই আমাদের আরও দুর্বল করার ষড়যন্ত্র!”
অর্থনৈতিক সংকট এবং অবিশ্বাস
এই ক্ষোভ শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতিতে সীমাবদ্ধ নয়। শোয়েব মানুষের কাছে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও প্রশ্ন করেছেন। এবং উত্তরগুলোতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে যে জনগণ তাদের সরকার এবং আমেরিকা—উভয়ের প্রতিই অসন্তুষ্ট। একজন যুবক বলেছেন, “আমাদের কাছে চাকরি নেই, খাবারের দাম বেড়ে গেছে, আর এখন এই যুদ্ধবিরতির কথা? এটা সবই আমাদের আরও দুর্বল করার ষড়যন্ত্র!”
শোয়েব চৌধুরীর এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এক্স (আগের টুইটার)-এ মানুষ #PakistanVsUSA এবং #IndiaPakistanCeasefire-এর মতো হ্যাশট্যাগ দিয়ে তাদের মতামত দিচ্ছেন। কিছু ব্যবহারকারী বলছেন যে পাকিস্তানের জনগণের ক্ষোভ যুক্তিসঙ্গত, কারণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আগে থেকেই খারাপ, এবং এখন আমেরিকার মধ্যস্থতা তাদের আরও অনিরাপদ বোধ করাচ্ছে। কিন্তু কিছু লোক এও বলছেন যে এই ক্ষোভ কেবল একটি ভুল বোঝাবুঝি, কারণ যুদ্ধবিরতি উভয় দেশের জন্যই উপকারী হতে পারে।
আমেরিকার প্রতি এত ক্ষোভ কেন? আসলে, পাকিস্তানের অনেকেই মনে করেন যে আমেরিকা সবসময় ভারতের পক্ষ নেয়। ২০২৫ সালে ট্রাম্পের পুনরায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি জনগণ মনে করে যে এই মধ্যস্থতা নিরপেক্ষ নয়। এছাড়াও, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও এই ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি চরম পর্যায়ে, পেট্রোল এবং বিদ্যুতের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, এবং আইএমএফ (IMF) থেকে ঋণের জন্য পাকিস্তানকে কঠোর শর্ত মানতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ আমেরিকাকে দোষারোপ করছে, কারণ আইএমএফ-এ আমেরিকার বড় প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়।
ভারতের অবস্থান এবং পাকিস্তানের ভয়
এখন প্রশ্ন হলো, এই পুরো বিষয়ে ভারতের অবস্থান কী? ভারত সবসময় বলেছে যে তারা পাকিস্তানের সাথে শান্তি চায়, কিন্তু সন্ত্রাসের ইস্যুতে কোনো আপস করবে না। ২০২৫ সালের যুদ্ধবিরতির কথা শুরু হওয়ার পর, ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা যেকোনো মধ্যস্থতার জন্য তখনই প্রস্তুত হবে যখন আলোচনা সন্ত্রাসবাদের উপর কেন্দ্র করে হবে। ‘বর্ডার ২’-এর মতো সিনেমার মাধ্যমেও ভারত তার দেশপ্রেম এবং সেনাবাহিনীর শক্তি দেখাচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানি জনগণ মনে করে যে ভারত এই যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। শোয়েব চৌধুরীর ভিডিওতে একজন ব্যক্তি বলেছেন, “ভারতের সেনাবাহিনী আগে থেকেই প্রস্তুত। যদি যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়, তাহলে তারা আমাদের মেরে ফেলবে!” এই ভয় এবং ক্ষোভ পাকিস্তানে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
শোয়েবের ভিডিওতে একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলেছেন, “আমাদের নিজেদের সরকারের উপর ভরসা নেই, আর আমেরিকার উপর তো একেবারেই নেই।” এই লাইনটি পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিকে ভালোভাবে তুলে ধরেছে। মানুষ তাদের সরকারের উপর যতটা অসন্তুষ্ট, আমেরিকা এবং ভারতের উপরও ততটাই অসন্তুষ্ট।
তাহলে, এই ছিল সেই গল্প যা পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ‘তাহলে ভারত আমাদের মেরে ফেলবে’—এই উক্তিটি কেবল একটি কথা নয়, বরং পাকিস্তানি জনগণের ভয়, ক্ষোভ এবং অবিশ্বাসের প্রতীক। আপনার কী মনে হয়? এই যুদ্ধবিরতি কি ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ককে আরও ভালো করবে, নাকি এটি কেবল আরেকটি ব্যর্থ চেষ্টা হবে? এবং আমেরিকার ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেন? নিচে মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না!