যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ভারত! আসছে সুপারসনিক বাঙ্কার বাস্টার মিসাইল, নৌবাহিনীতে যুক্ত হলো আরও শক্তিশালী রণতরী

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ভারত! আসছে সুপারসনিক বাঙ্কার বাস্টার মিসাইল, নৌবাহিনীতে যুক্ত হলো আরও শক্তিশালী রণতরী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সাল থেকে ভারত তার সামরিক বাহিনীকে স্বনির্ভর, দেশীয় প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে এমনভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে, যাতে স্থল, বায়ু, এবং সমুদ্রের গভীরতা থেকে মহাকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নিজেদের সুরক্ষার জন্য অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে না হয়। অত্যাধুনিক ড্রোন থেকে শুরু করে অবিশ্বাস্য বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত এখন ভারতেই তৈরি হচ্ছে।

সম্প্রতি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের সময় শক্তিশালী পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার ক্ষমতা না থাকায় ইসরায়েলকে আমেরিকার দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি এড়াতেই ভারত এখন বাঙ্কার বাস্টার বোমা তৈরির দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের কাছে এই প্রযুক্তি রয়েছে। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই বাঙ্কার বাস্টার বোমা যখন প্রস্তুত হবে, তখন আমাদের অগ্নি-৫ মিসাইল শত্রুর শক্তিশালী ঘাঁটি এবং ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারগুলোকে মুহূর্তে ধ্বংস করে ফিরে আসতে পারবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সম্প্রতি ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার অনুমোদন দিয়েছে, যা আত্মনির্ভরতার দিকে আরও একটি বড় পদক্ষেপ।

ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত
ডিআরডিও (DRDO) অগ্নি-৫ মিসাইলের দুটি নতুন উন্নত সংস্করণ তৈরি করছে। এর প্রথম সংস্করণটি একটি বাঙ্কার বাস্টার ওয়ারহেড বহন করবে, যা মাটির ৮০ থেকে ১০০ মিটার গভীরে প্রবেশ করে শত্রুর ঘাঁটি ধ্বংস করতে সক্ষম। দ্বিতীয় সংস্করণটি বিশেষভাবে বিস্ফোরক বহন করবে, যা শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, পারমাণবিক ব্যবস্থা, রাডার সিস্টেম, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার এবং অস্ত্র ডিপো ধ্বংস করে ফিরে আসবে। অগ্নি-৫ বাঙ্কার বাস্টার মিসাইল স্থল, সড়ক এবং মোবাইল লঞ্চার থেকে উৎক্ষেপণ করা যাবে। অগ্নি-৫ হলো ভারতের এমন একটি মিসাইল, যা এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে আঘাত হানতে পারে; এর পাল্লা ৫ থেকে ৭ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এটি পারমাণবিক অস্ত্রও বহন করতে সক্ষম। ভারতের এই বাঙ্কার বাস্টার বোমা আমেরিকান বোমার চেয়েও বেশি শক্তিশালী এবং গভীর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম হবে, যা চীন ও পাকিস্তানের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি
ভারতীয় নৌবাহিনীতে এবার যুক্ত হয়েছে ব্রাহ্মোস মিসাইলে সজ্জিত সবচেয়ে আধুনিক স্টিলথ যুদ্ধজাহাজ আইএনএস তামাল, যা সমুদ্রপথে ভারতের শক্তিকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদে এই বহুমুখী অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজের উদ্বোধন হয়েছে। নৌবাহিনীর পশ্চিমা বহরে অন্তর্ভুক্ত এই যুদ্ধজাহাজটি ভারত মহাসাগরে মোতায়েন থাকবে এবং পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারিতে ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তামাল যুদ্ধজাহাজ গত দুই দশকে রাশিয়া থেকে প্রাপ্ত ক্রিয়াক শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজের অষ্টম সংযোজন এবং এটি পূর্ববর্তী সংস্করণগুলোর তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। এতে উল্লম্বভাবে উৎক্ষেপণযোগ্য সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল, উন্নত ১০০ মিমি কামান, ৩০ মিমি স্ট্যান্ডার্ড গান ক্লোজ-ইন অস্ত্র ব্যবস্থা, আধুনিক টর্পেডো, সাবমেরিন-বিরোধী রকেট এবং অসংখ্য নজরদারি ও ফায়ার কন্ট্রোল রাডার সিস্টেম রয়েছে।

এই যুদ্ধজাহাজের নামকরণ করা হয়েছে দেবরাজ ইন্দ্রের পৌরাণিক তরোয়াল ‘তামাল’ এর নামে, যা এর দ্রুত, আক্রমণাত্মক এবং নির্ণায়ক ক্ষমতাকে নির্দেশ করে। এর মাস্কট ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর অমর ভালুক জাম্ববন্ত এবং রাশিয়ান জাতীয় প্রাণী ইউরেশিয়ান বাদামী ভালুকের সাদৃশ্য থেকে অনুপ্রাণিত। তামাল যুদ্ধজাহাজ রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদের ইয়ান্তার শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয়েছে এবং এতে ২৬ শতাংশ দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এটিই বিদেশে নির্মিত শেষ যুদ্ধজাহাজ; এরপর থেকে এমন কোনো যুদ্ধজাহাজ ভারতেই নির্মিত হবে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি আরও বাড়িয়ে দেবে। এই যুদ্ধজাহাজের দক্ষ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২৫০ জন নৌবাহিনীর কর্মী রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই বহুমুখী মিশন যুদ্ধজাহাজ ভারতের সামুদ্রিক স্বার্থের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী এবং অপ্রথাগত উভয় ধরনের হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম।

ভারতীয় নৌবাহিনী আরও একটি দেশীয় যুদ্ধজাহাজ ‘উদয়গিরি’র উপহার পেয়েছে। এই যুদ্ধজাহাজে সুপারসোনিক সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল সিস্টেম, ৭৬ মিমি গান, ৩০ মিমি এবং ১২.৭ মিমি র‍্যাপিড ফায়ার গানসহ ডিজেল ইঞ্জিন এবং গ্যাস টারবাইনযুক্ত সিওডিজি সিস্টেম রয়েছে। ৩৯০০ টন ওজনের এবং ১২৫ মিটার লম্বা এই যুদ্ধজাহাজে সারফেস-টু-এয়ার মিসাইলও সজ্জিত আছে। এই দুটি যুদ্ধজাহাজই ভারতের সামুদ্রিক সীমান্তের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *