সালবেগের ভক্তিতে থমকে গেল জগন্নাথের রথ

সালবেগের ভক্তিতে থমকে গেল জগন্নাথের রথ

শ্রী জগন্নাথ, ভক্তের ভগবান, যাঁর কাছে ধর্ম, জাত বা সম্প্রদায়ের কোনও বাধা নেই। তাঁর পরম ভক্ত সালবেগের জীবন এই সত্যের এক অমর দৃষ্টান্ত। সালবেগ, যিনি একজন মুসলিম সেনাপতি বলবেগের পুত্র এবং এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বিধবার সন্তান, ছোট থেকেই মায়ের কাছ থেকে জগন্নাথ ভক্তির শিক্ষা পেয়েছিলেন। তাঁর অটল ভক্তি ও নিষ্ঠা জগন্নাথদেবের প্রতি তাঁকে এক অনন্য ভক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু বিধর্মী হওয়ার কারণে তিনি শ্রীমন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পাননি। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। পুরীর কাছে বলগণ্ডিতে একটি কুটির তৈরি করে তিনি রথযাত্রার দিনে প্রভু জগন্নাথের দর্শনের অপেক্ষায় থাকতেন। তাঁর ভক্তি ছিল এতটাই গভীর যে, তিনি জানতেন, রথযাত্রার দিন জগন্নাথ সকলের জন্য বাইরে এসে কৃপাদৃষ্টি দেন।

একবার বৃন্দাবনে থাকাকালীন সালবেগ জানতে পারেন রথযাত্রার সময় ঘনিয়ে এসেছে। প্রাণে উৎসাহ জেগে তিনি পুরীর দিকে যাত্রা শুরু করেন, কিন্তু পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মনে ভয় জাগে, এবার হয়তো প্রভুর দর্শন মিলবে না। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি প্রার্থনা করেন, “প্রভু, আমার জন্য অপেক্ষা করো।” এদিকে, উল্টোরথের দিন নন্দীঘোষ রথে চড়ে জগন্নাথ শ্রীমন্দিরের দিকে ফিরছিলেন। হঠাৎ রথ থেমে যায়, শত শত ভক্তের টানেও চাকা একচুল নড়ে না। সাতদিন ধরে রথ স্থির। ঠিক তখনই দূর থেকে ভেসে আসে সালবেগের ভক্তিভরা কণ্ঠে গাওয়া ভজন। অসুস্থ দেহে তিনি রথের সামনে পৌঁছে প্রভুকে দেখেন। সেই মুহূর্তে রথ আবার চলতে শুরু করে! ভক্তরা বিস্ময়ে হতবাক। প্রভু জগন্নাথ সালবেগের জন্যই সাতদিন অপেক্ষা করেছিলেন। সালবেগ সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করেন, তাঁর আত্মা মিশে যায় জগন্নাথের চরণে। তাঁর রচিত ভজন, বিশেষ করে ‘আহে নীল শৈল’, আজও ভক্তদের হৃদয়ে জাগায় ভক্তির জোয়ার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *