বিশ্বের ৪ প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি, ভারত এখন কোথায় দাঁড়িয়ে?

একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব নিরাপত্তার চেহারা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী যুদ্ধের সম্ভাবনা কমলেও, কৌশলগত অস্ত্রের, বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্রের গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র এখন শুধু আক্রমণের মাধ্যম নয়, বরং ক্ষমতা-ভারসাম্য এবং ভূ-রাজনৈতিক চাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনকে ক্ষেপণাস্ত্রের সুপারপাওয়ার হিসেবে দেখা হলেও, এখন ভারতও এই শক্তি তালিকায় দৃঢ়ভাবে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি হিসেবে বিবেচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে Minuteman III ICBM, Trident II D-5 SLBM-এর মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, এবং তারা হাইপারসোনিক গবেষণায় দ্রুত এগিয়ে চলেছে। রাশিয়া RS-28 Sarmat (NATO-তে ‘সাতান-২’ নামে পরিচিত) এবং Avangard হাইপারসোনিক গ্লাইড ভেহিকল-এর মতো নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। অন্যদিকে, চীন DF-41 ICBM এবং JL-3 SLBM-এর মাধ্যমে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করেছে, যা তাদের আমেরিকা ও রাশিয়ার সমকক্ষ করে তুলেছে।
ভারতের উত্থান: চতুর্থ ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ
গত এক দশকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের অগ্রগতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-এর নেতৃত্বে ভারত ক্ষেপণাস্ত্রের এমন মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা তাকে বিশ্বের শীর্ষ চারটি ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির মধ্যে স্থান করে দিয়েছে। ভারতের অগ্নি-৫ (Agni-V), যার পাল্লা ৭০০০ থেকে ৮০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বলে অনুমান করা হয়, মার্চ ২০২৪-এ সফলভাবে MIRV (Multiple Independently targetable Reentry Vehicle) সংস্করণ পরীক্ষা করেছে। এই প্রযুক্তি বর্তমানে শুধুমাত্র আমেরিকা, রাশিয়া, চীন এবং ভারতের কাছেই রয়েছে।
এছাড়াও, ভারত-রুশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মোস (BrahMos) সুপারসোনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি, জল এবং আকাশ থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়, যার গতি ম্যাক ২.৮। বর্তমানে ভারত ব্রহ্মোস-২ নামক হাইপারসোনিক সংস্করণ (ম্যাক ৮, ১৫০০+ কিমি) নিয়ে কাজ করছে। ভারতের হাইপারসোনিক প্রোগ্রামও দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, যেখানে HSTDV (Hypersonic Technology Demonstrator Vehicle)-এর সফল পরীক্ষা এবং নতুন LRAShM (Long-Range Air-Launched Supersonic Missile) পদ্ধতির ঘোষণা ভারতকে পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে অগ্রণী করে তুলছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর অধীনে ৮০% এরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এখন দেশীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে, যা ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিকে কেবল সংখ্যায় নয়, প্রযুক্তিগত গুণমান এবং আত্মনির্ভরতার দিক থেকেও শক্তিশালী করে তুলেছে।