ইউক্রেন যুদ্ধ কি তেলের টাকায় নয়? পুতিনের ‘কুবেরের ভাণ্ডার’ ফাঁস, ভারতের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশের ফাঁকা হুমকি!

ইউক্রেন যুদ্ধ কি তেলের টাকায় নয়? পুতিনের ‘কুবেরের ভাণ্ডার’ ফাঁস, ভারতের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশের ফাঁকা হুমকি!

ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির প্রাক্তন কর্মকর্তা টম শার্প একটি কলামে ভারতকে হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, ভারতকে আমেরিকা বা রাশিয়ার মধ্যে একটি পক্ষ বেছে নিতেই হবে, অন্যথায় ভারতের সঙ্গে ‘শত্রুর মতো আচরণ’ করা হবে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে ভারত পুতিনের ‘অত্যাচারে’ অর্থায়ন করছে এবং অংশীদারের পরিবর্তে ভূ-রাজনৈতিক শত্রুর মতো আচরণ করছে। ভারতের বিরুদ্ধে প্রায়শই রাশিয়ার তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থায়নে সহায়তা করার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর বিশেষজ্ঞরা এটা বুঝতে চান না যে, ভারতের রাশিয়ান তেল বা অস্ত্র কেনার কারণে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে না, বরং তাদের কাছে পারমাণবিক ধাতুর এক অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে, যা পুতিনের জন্য ‘কুবেরের ধন’-এর মতো।

রাশিয়ার এমন একটি পারমাণবিক শিল্প রয়েছে যা পুতিনকে বছরের পর বছর ধরে ইউক্রেনে যুদ্ধ করার ক্ষমতা যোগাবে। এর ফলে শুধু রাশিয়ার শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা বাড়ছে না, পুতিন এটিকে একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করছেন। রাশিয়ার সরকারি পারমাণবিক কো ম্পা নি রোসাটম (Rosatom) বিশ্বব্যাপী ৬৫% পারমাণবিক চুল্লি রপ্তানি এবং ৪৪% ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অপ্রসারণ নীতি, নিরাপত্তা মান এবং কূটনৈতিক চাপের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়।

রাশিয়ার পারমাণবিক বাজারের শক্তি এবং ভূ-রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
পারমাণবিক শিল্প মূলত দুটি প্রধান বাজারে বিভক্ত: পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা চুল্লি নির্মাণ এবং সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানির উৎপাদন ও সরবরাহ। উভয় ক্ষেত্রেই রাশিয়া বাজারের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে আছে। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার সরকারি পারমাণবিক কর্পোরেশন রোসাটম বিদেশে প্রায় ২০টি চুল্লি নির্মাণে জড়িত, যার মধ্যে তুরস্ক, মিশর, ভারত এবং বাংলাদেশের মতো দেশে সক্রিয় প্রকল্প রয়েছে। এমনকি পুতিনের সমালোচনাকারী ইউরোপীয় দেশগুলোও রাশিয়ার প্রযুক্তি ও পারমাণবিক জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সালে, আমেরিকা তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রায় এক-চতুর্থাংশ রাশিয়া থেকে কিনেছে, যা ইউক্রেন যুদ্ধের পরেও অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে, আমেরিকা রাশিয়ার কাছ থেকে পারমাণবিক শক্তি কিনছে, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে বিল আনছে। আমেরিকায় একটি নতুন বিল প্রস্তাব করা হচ্ছে, যেখানে রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত বিলের অধীনে ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর ওপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, যদি তারা রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রাখে। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের যুক্তি হলো, রাশিয়ার তেল বিক্রি তাকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য তহবিল সরবরাহ করছে এবং যারা এই তেল কিনছে, তারা পরোক্ষভাবে পুতিনের যুদ্ধনীতিকে সমর্থন করছে। এই বিলকে মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ভারত ও চীনের বিরুদ্ধে ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বিল বলে অভিহিত করেছেন। ভারত অবশ্য তাদের জ্বালানি নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অংশ না হওয়ার যুক্তি দিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *