ম্যাঙ্গোপে, ড্রাগনপে, সুপারপে! চীনের মুনাফা, ভারতীয়দের চুনকাম, গ্রেপ্তার ৭ এজেন্ট

ম্যাঙ্গোপে, ড্রাগনপে, সুপারপে! চীনের মুনাফা, ভারতীয়দের চুনকাম, গ্রেপ্তার ৭ এজেন্ট

আধুনিকতার এই যুগে সাইবার জালিয়াতি একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মোকাবিলায় ঝাড়খণ্ড (রাঁচি) এর অপরাধ তদন্ত বিভাগ নিরন্তর কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ঝাড়খণ্ড সিআইডি-এর দল একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে। রাঁচির জগন্নাথপুর থানা এলাকার অলিভ গার্ডেন নামের একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে ৭ জন সাইবার অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সকল আসামি চীনা সাইবার জালিয়াতির নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ছিল। তারা ভারতে চীনা গ্যাংয়ের জন্য কাজ করত।

এই ব্যক্তিরা প্রথমে লোকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করাত এবং তারপর তাদের প্রতারণা করত। শুধু তাই নয়, তারা ডিজিটাল গ্রেফতারির ভয় দেখিয়েও টাকা আদায় করত। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি-এর সাইবার ক্রাইম শাখা হোটেলে অভিযান চালায়। গ্রেপ্তারকৃত ৭ সাইবার অপরাধীর পরিচয় জানা গেছে বিহারের সিওয়ান জেলার টাউন থানার কুমার দীপক, নালন্দা জেলার বিন্ধ থানা এলাকার কুমার সৌরভ, সিওয়ান জেলার টাউন থানা এলাকার প্রভাত কুমার, মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার লাখন চৌরাসিয়া, পাটনা জেলার দিদারগঞ্জ থানা এলাকার অনিল কুমার, নওয়াদা জেলার শিবম কুমার এবং পাটনা জেলার গৌরীচক থানা এলাকার প্রদীপ কুমার হিসেবে।

কোটি কোটি টাকার প্রতারণা এবং সিআইডি-এর আবেদন
গ্রেপ্তারকৃত সাইবার অপরাধীদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন, ১১টি সিম, ১৪টি এটিএম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, একটি চেক বই ছাড়াও ৬০টিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম চ্যাটের বিবরণী জব্দ করা হয়েছে। রাঁচির অপরাধ তদন্ত বিভাগ অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত ৭ সাইবার অপরাধী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চীনা সাইবার অপরাধীদের কাছে ‘মিউল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট’ সরবরাহ করত। গ্রেপ্তারকৃত সাইবার অপরাধীদের মধ্যে একজন বিশেষ এজেন্টও রয়েছে, যে চীনা মিলনে, ড্রাগনপে, সুপার পে, ম্যাঙ্গোপে ইন্ডিয়া-এর জন্য কাজ করছিল।

গ্রেপ্তারকৃত চীনা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত এজেন্টদের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ এবং টেলিগ্রাম চ্যাটও উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং ডিজিটাল প্রমাণ ছিল। আসলে, চীনা গ্যাংয়ের জন্য কাজ করা এজেন্টদের টেলিগ্রামের মাধ্যমে একটি অ্যাপ্লিকেশন (এপিকে ফাইল) পাঠানো হত। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো তারা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সিম কার্ডে ইনস্টল করত। ইনস্টল করার পর, এই অ্যাপ্লিকেশনগুলো ওটিপি এবং ব্যাংক অ্যাকসেস চীনা সার্ভারে প্রেরণ করত। এর মাধ্যমে চীনে বসে থাকা অপরাধীরা সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রবেশাধিকার পেয়ে কোটি কোটি টাকার জালিয়াতি করত। গ্রেপ্তারকৃত চীনা গ্যাংয়ের এজেন্টদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত তদন্তে ৬০টি ‘মিউল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট’ পাওয়া গেছে। এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে মোট ৬৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অপরাধ তদন্ত বিভাগ রাঁচি ঝাড়খণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেছে যে, এমন সাইবার জালিয়াতি থেকে বাঁচতে কোনো ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ সংক্রান্ত অফারে ক্লিক করার আগে অবশ্যই তা যাচাই করে নিন। এছাড়াও, বিনিয়োগের নামে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ইউপিআই থেকে টাকা জমা করবেন না। এর পাশাপাশি, যেকোনো ধরনের সাইবার জালিয়াতির শিকার হলে অবিলম্বে সাইবার হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০ বা www.cybercrime.gov.in-এ অভিযোগ দায়ের করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *