ঘুমে সমস্যা? কম ঘুমে বিগড়ে যেতে পারে মানসিক স্বাস্থ্য

আপনিও কি ঘুমের অভাবে ভুগছেন? বেশিরভাগ মানুষই জানেন যে সুস্থ থাকার জন্য ঘুম খুব জরুরি, তবে এই তথ্য যথেষ্ট নয়। সত্যি বলতে কি, ঘুম আমাদের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। এখন পর্যন্ত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ভালো ঘুম আমাদের মানসিক এবং আবেগিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। ভালো ঘুমের অভাব মানসিক ও আবেগিক স্বাস্থ্য দুর্বল হওয়ার কারণ এবং ফলাফল উভয়ই হতে পারে।
বিষণ্ণতা, চাপ এবং অন্যান্য মানসিক রোগে ভালো ঘুম আসা কঠিন হয়ে পড়ে। একই সাথে, অনিদ্রা বা ভালো ঘুমের অভাব মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। ঘুমের উন্নতি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে, পাশাপাশি অনেক মানসিক রোগের চিকিৎসার মাধ্যমও হতে পারে। আজকের দ্রুত জীবনযাত্রায় ঘুমকে প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। দেরিতে রাত পর্যন্ত মোবাইল ব্যবহার করা, অতিরিক্ত সময় কাজ করা বা উদ্বেগে ডুবে থাকা—এগুলো সবই ঘুমের গুণমান নষ্ট করে। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ঘুমের সরাসরি প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্যের উপর পড়ে? ক্রমাগত খারাপ ঘুম কেবল ক্লান্তি বা বিরক্তিই বাড়ায় না, বরং বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
ঘুম কম হলে কী কী সমস্যা বাড়ে?
গাজিয়াবাদের জেলা হাসপাতালের সিনিয়র ফিজিশিয়ান ড. সন্তরাম ভার্মা জানান যে, যখন আমরা ঠিকমতো ঘুমাই না, তখন মস্তিষ্ক বিশ্রাম নিতে এবং নিজেকে পুনরায় সেট করার সময় পায় না। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক দিনের বেলায় প্রাপ্ত তথ্য প্রক্রিয়া করে, দিনের স্মৃতি সংগ্রহ করে এবং আবেগিক ভারসাম্য বজায় রাখে। যদি ঘুম আসাম্পূর্ণ থাকে, তাহলে এই প্রক্রিয়াগুলো বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা হতে পারে।
স্ট্রেস হরমোন (কর্টিসল) বাড়ে: খারাপ ঘুমের একটি বড় প্রভাব চাপ এবং উদ্বেগের উপরও পড়ে। যখন শরীর এবং মস্তিষ্ক সম্পূর্ণরূপে বিশ্রাম পায় না, তখন স্ট্রেস হরমোন (কর্টিসল) এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এর ফলে মনে অস্থিরতা, ভয় এবং ঘাবড়ানো ভাব বজায় থাকে। অনেক সময় এই অবস্থা প্যানিক অ্যাটাক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
খারাপ ঘুমের মানসিক প্রভাবগুলি হলো:
মেজাজ পরিবর্তন এবং বিরক্তি বাড়ে: কম ঘুমালে মস্তিষ্ক শান্ত হতে পারে না, যার ফলে ছোট ছোট বিষয়ে রাগ, কান্না বা বিরক্ত হওয়া সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে চাপ এবং উদ্বেগ বাড়ে।
বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ে: ক্রমাগত খারাপ ঘুমের কারণে মস্তিষ্কে নেতিবাচক চিন্তা বাড়ে এবং ব্যক্তি মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করে।
মনোযোগ এবং ফোকাস দুর্বল হয়: ঘুম পূর্ণ না হলে মস্তিষ্ক এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না, যার ফলে বিভ্রান্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা হয়। এতে স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হয়।
ঘুম উন্নত করার জন্য কী করবেন?
১. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন।
২. ঘুমানোর আগে স্ক্রিন টাইম (মোবাইল/টিভি) কমিয়ে দিন।
৩. রাতে খুব ভারী খাবার বা ক্যাফেইন গ্রহণ করবেন না।
৪. ঘুমানোর আগে হালকা সঙ্গীত শুনুন, বই পড়ুন বা মেডিটেশন করুন।
৫. ঘরের পরিবেশ শান্ত, ঠাণ্ডা এবং অন্ধকার রাখুন।