ডোবাল থেকে জয়শঙ্কর পর্যন্ত, মোদীর ৩ ফর্মুলায় এগোচ্ছে ভারত! ট্রাম্পের অস্বস্তিকর ভূমিকার কারণে কি ভারত-চীন কাছাকাছি আসছে?

২০২৫ সালের ২৩শে জুন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলেন। এর ঠিক ২ দিন পর, ২৫শে জুন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বেইজিংয়ে পৌঁছান। এখন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অর্থাৎ, গত প্রায় ২০ দিনে ভারতের পক্ষ থেকে তিনটি উচ্চ-প্রোফাইল চীন সফর আকার নিচ্ছে। যদিও এই তিনটি সফরই এসসিও (সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা) মিটিংকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। চীন এই মুহূর্তে এসসিও-এর সভাপতি। তারা বিভিন্ন স্তরে এর বৈঠক আয়োজন করছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, অপারেশন সিন্দুরের পরের পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে আমেরিকা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্বস্তিকর ভূমিকার কারণে কি চীন ও ভারতের সম্পর্কে জমে থাকা বরফ দ্রুত গলছে? সূত্র অনুযায়ী, বিদেশমন্ত্রী ১৩ই জুলাই থেকে তিন দিনের সফরে বেইজিং এবং তিয়ানজিনে পৌঁছাবেন, যেখানে তিনি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে অংশ নেবেন। এই বছর এসসিও-এর সভাপতিত্ব করছে চীন। জয়শঙ্করের এই সফরকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কারণ এটি জুন ২০২০-তে গালওয়ান উপত্যকার হিংসাত্মক সংঘর্ষের পর জয়শঙ্করের প্রথম চীন সফর হবে। এর আগে তিনি বিভিন্ন বহুপাক্ষিক মঞ্চে তার চীনা প্রতিপক্ষের সাথে দেখা করেছেন, কিন্তু এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতা
এর আগে ব্রিক্স বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্ট করেছিলেন যে, ভারত-চীন সম্পর্ককে তিনটি ‘পারস্পরিকতা’ – পারস্পরিক বিশ্বাস, পারস্পরিক সম্মান এবং পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত, যাতে এই সম্পর্ক ইতিবাচক দিকে ফিরে আসে এবং টেকসই হয়। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি বেইজিং সফর করেন এবং বিভিন্ন জটিল বিষয়ে গভীর আলোচনা করেন। এসসিও-এর নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ২০তম বৈঠকে অজিত ডোভাল বলেছিলেন যে, ভারত লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মুহাম্মদ, আল-কায়েদা এবং আইএসআইএস-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি থেকে উদ্ভূত হুমকি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতি ত্যাগ করার এবং জাতিসংঘ কর্তৃক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী ও সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন।
অজিত ডোভাল ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক করেছেন
ডোভালের চীনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সাথে সাক্ষাতে ভারত-চীন সম্পর্কের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়। একই সাথে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়। এরই মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল ডং জুনের সাথে দেখা করেন। বৈঠকে উভয় পক্ষ ভারত-চীন সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য উভয় দেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি জটিল বিষয়গুলিকে স্থায়ী আলোচনা এবং ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন।
সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা
বিদেশমন্ত্রীর এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ভারত-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে অনেক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর অক্টোবর ২০২৩-এ রাশিয়ার কাজানে ব্রিক্স সম্মেলনের সময় অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এই প্রক্রিয়াকে গতি দিয়েছে। এই বৈঠক পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবার প্রতিনিধি দল স্তরে হয়েছিল।