আমার মেয়ে এখানেই ছিল! বন্যার ধ্বংসাবশেষে মিলল তোয়ালে, ছবি আর এক ভগ্নহৃদয় বাবার শেষ আশা

এক গ্রীষ্মকালীন শিবির, যেখানে একসময় হাসির কলরব শোনা যেত, আজ সেখানে শুধু ধ্বংসাবশেষ, ভাঙা দেয়াল এবং কাদায় ডুবে থাকা স্মৃতিচিহ্ন পড়ে আছে। টেক্সাসের ক্যাম্প মিস্টিক-এ (Camp Mystic) সেদিন সকালে বিপর্যয় নেমে আসে, যখন গুয়াডালুপে নদী (Guadalupe River) তার সীমা অতিক্রম করে। মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে ২৬ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া জল শিশুদের কেবিনগুলিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রায় ৭৫০ জন শিশুর মধ্যে ২৭ জন এখনও নিখোঁজ এবং বন্যায় এ পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো বাবা তার মেয়ের নাম লেখা তোয়ালে খুঁজে পেয়েছেন, কেউবা গাছে আটকে থাকা মেয়েকে বাঁচতে দেখেছেন, এবং অনেকেই এখনও শুধু একটি অলৌকিকের আশায় প্রার্থনা করছেন।
এই ধ্বংসযজ্ঞের পর একজন বাবা ভাঙা জানালা এবং কাদামাটির মধ্যে তার হারিয়ে যাওয়া আশার সন্ধান করছেন। অস্টিনের বাসিন্দা মাইকেল, যিনি তার ৮ বছর বয়সী মেয়ের খোঁজে ক্যাম্প মিস্টিক পৌঁছেছেন, সেখানে ভাঙা জানালা এবং ধসে পড়া কেবিনগুলির মধ্যে ঘুরতে দেখা যায় তাকে। মাইকেল মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় বলেন, “আমার মেয়ে এখানেই ছিল,” যখন তিনি ধ্বংসাবশেষে একটি তোয়ালে খুঁজে পান যেখানে তার মেয়ের নাম লেখা ছিল। পাশেই পড়ে ছিল তার একটি ব্রেসলেট এবং একটি পারিবারিক ছবিও পাওয়া যায়। শুক্রবার সকালে মাইকেলের কাছে সেই ফোন কলটি আসে, যা যেকোনো অভিভাবকের জন্য সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন। তাকে জানানো হয়, “আপনার মেয়ে নিখোঁজ।”
উদ্ধার অভিযান জোরদার, হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হলো শিশু
গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানান যে, একটি শিশুকে গাছে আটকে থাকতে দেখা গেছে, যাকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে হাজার হাজার কর্মী, হেলিকপ্টার, নৌকা এবং ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে, যারা কাদা এবং ধ্বংসাবশেষে আটকে থাকা লোকদের সন্ধান করছে। ক্যাম্প মিস্টিকের ডাইনিং হলের একটি পুরো দেয়াল বন্যায় ভেসে গেছে। ক্যাম্পাসের চারপাশে ম্যাপেল সিরাপ এবং হট সসের বোতলগুলি কাদায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে – যা সেখানকার দৈনন্দিন সংস্কৃতির অংশ ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা গেরার্ডো মার্টিনেজ মিডিয়ার কাছে বলেন, “এখানে একটি প্রবাদ আছে যে, প্রতি ১০০ বছরে একবার বন্যা আসে। এবার সেই বন্যা এসে গেছে।” মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের শিশুদের ছবি পোস্ট করছে, প্রার্থনা করছে এবং ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে তাদের সন্তানদের খোঁজে পৌঁছেছে। বন্যার তিন দিন পরেও মাইকেল এখনও ক্যাম্প মিস্টিকের কাদা ভরা মাটিতে তার মেয়ের সন্ধানে নিয়োজিত। তিনি বলেন, “আমি আশা করি কোনো অলৌকিক ঘটনা ঘটবে।”