‘ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে দ্রুত বাড়ি খালি করান,’ সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির জবাব

ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি (CJI) ডিওয়াই চন্দ্রচূড় অবসর গ্রহণের পরও সরকারি বাসভবনে থাকছেন। তাকে ৩১শে মে পর্যন্ত এই বাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা এখন অতিক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র সরকারকে চিঠি লিখে দ্রুত বাড়িটি খালি করার অনুরোধ জানিয়েছে। শীর্ষ আদালত কৃষ্ণ মেনন মার্গ স্থিত ৫ নম্বর বাংলো খালি করার জন্য আবাসন মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে, এবং বলেছে যে প্রাক্তন CJI-এর কাছ থেকে দ্রুত এই বাংলোর দখল ফিরিয়ে নেওয়া হোক।
আদালত জানিয়েছে যে, চন্দ্রচূড় নিয়ম ৩বি এর অধীনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে সরকারি বাসভবনে থাকছেন। নিয়ম অনুযায়ী, অবসরের পর তিনি ছয় মাস পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারতেন। তিনি ১০ই নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অবসর গ্রহণ করেন। সেই হিসাবে, বাংলো খালি করার শেষ তারিখ ছিল ১০ই মে ২০২৫। এরপর তিনি দুইবার এই সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করেন, যা গ্রহণ করা হয়েছিল এবং তাকে ৩১শে মে ২০২৫ পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। স্পষ্টতই, সেই তারিখও পার হয়ে গেছে, এবং প্রায় আট মাস পরও বাড়িটি খালি হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আবাসন সমস্যা এবং প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির প্রতিক্রিয়া
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে যে, তাদের কৃষ্ণ মেনন মার্গ স্থিত বাংলোটির অবিলম্বে প্রয়োজন। এটি মূলত প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন। কিন্তু প্রাক্তন CJI চন্দ্রচূড়ের অবসরের পর, তার উত্তরসূরি সঞ্জীব খান্না এবং বর্তমান CJI বিআর গাভাই কৃষ্ণ মেনন মার্গে যাওয়ার বিকল্প বেছে নেননি। তারা দুজনেই তাদের পুরনো সরকারি বাসভবনেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে অনুমোদিত বিচারকের সংখ্যা ৩৪। বর্তমানে CJI বিআর গাভাই সহ ৩৩ জন বিচারক নিযুক্ত আছেন। শীর্ষ আদালতের চারজন বিচারককে এখনও সরকারি আবাসন বরাদ্দ করা হয়নি। এনডিটিভি সূত্রের খবর অনুযায়ী, এদের মধ্যে তিনজন বিচারক সুপ্রিম কোর্টের ট্রানজিট অ্যাপার্টমেন্টে এবং একজন বিচারক স্টেট গেস্ট হাউসে থাকছেন।
এই বিষয়ে প্রাক্তন CJI চন্দ্রচূড় নিজেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, ব্যক্তিগত কারণে আবাসন খালি করতে দেরি হয়েছে এবং এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এনডিটিভিকে তিনি বলেন যে, সরকারি বাসভবনে বেশি দিন থাকার তার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরও বলেন যে, তার মেয়েদের কিছু নির্দিষ্ট সুবিধার প্রয়োজন এমন একটি বাড়ির প্রয়োজন। তিনি যোগ করেন, “আমি ফেব্রুয়ারি থেকেই এদিক-ওদিক ঘুরছি। আমি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট এবং হোটেলও চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই কার্যকর হয়নি।” প্রাক্তন CJI আরও জানান যে, ২৮শে এপ্রিল তিনি তৎকালীন CJI সঞ্জীব খান্নাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে, তিনি নিজের জন্য একটি আবাসনের সন্ধান করছেন এবং তাকে ৩০শে জুন পর্যন্ত বাংলোতে থাকার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু কোনো উত্তর পাননি। এটি তার তৃতীয় অনুরোধ ছিল। প্রাক্তন CJI চন্দ্রচূড় এও জানান যে, তিনি বর্তমান CJI গাভাইয়ের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলেছেন এবং তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি খালি করে দেবেন।
নতুন আবাসনের অবস্থা এবং প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বাধ্যবাধকতা
প্রাক্তন CJI চন্দ্রচূড় জানান যে, সরকার তাকে ভাড়ায় একটি অস্থায়ী বাড়ি বরাদ্দ করেছে। কিন্তু সেই বাংলোটি গত দু’বছর ধরে কেউ ব্যবহার করেনি। এর মেরামত ও সংস্কারের কাজ চলছে। তিনি বলেন, “আমার বেশিরভাগ জিনিসপত্র প্যাক হয়ে গেছে। প্যাকিং সম্পূর্ণ হলেই আমি সরে যাব। এটা কয়েক দিনের ব্যাপার। আমার (বেশিদিন থাকার) কোনো আগ্রহ নেই, কিন্তু আমার কাছে কোনো বিকল্পও নেই।” উল্লেখ্য, প্রাক্তন CJI ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের অবসরের পর, ১১ই নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সঞ্জীব খান্না CJI হন। তিনি ১৩ই মে ২০২৫ তারিখে অবসর নেন। এরপর থেকে CJI বিআর গাভাই এই পদে রয়েছেন।