ইরান আক্রমণে ইসরায়েলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে? ধ্বংসের দৃশ্য আড়াল করতে ব্যস্ত নেতানিয়াহু

১২ দিন ধরে চলা ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। দ্য টেলিগ্রাফের এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। এর মধ্যে একটি বড় বিমানবন্দর, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কেন্দ্র এবং একটি লজিস্টিকস বেসও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই তথ্য আমেরিকান ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা স্যাটেলাইট রাডার ডেটার ভিত্তিতে দিয়েছেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইরানের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই ঘাঁটিগুলির ক্ষতি করেছে। যদিও এই ক্ষতির সম্পূর্ণ তথ্য এখনও সামনে আসেনি, কারণ ইসরায়েল সামরিক সেন্সরশিপ (military censorship) প্রয়োগ করে তা গোপন করার চেষ্টা করেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ – IDF) এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে সরাসরি অস্বীকার করেছে এবং শুধু জানিয়েছে যে, “এই অপারেশনের সময় সমস্ত ইউনিট তাদের সেরাটা দিয়েছে।”
ক্ষতির পরিমাণ কত?
রাডার ডেটা অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইসরায়েলের সামরিক কাঠামোতে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তেল আবিব, হাইফা এবং বিয়ার শেভার মতো শহরগুলিতে নাগরিক এবং সামরিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩,২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, ইরানও এই যুদ্ধের জন্য চড়া মূল্য দিয়েছে। তাদের নাতাঞ্জ, ফোর্ডো এবং ইসফাহানের মতো পারমাণবিক ও সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। এতে ৬৫৭ থেকে ৮০০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬৩ জন সাধারণ নাগরিক ছিলেন।
কেন লুকানো হচ্ছে সত্য?
দ্য টেলিগ্রাফের রিপোর্ট বলছে যে, ইসরায়েল তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা লুকানোর জন্য সামরিক সেন্সরশিপের আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধের সপ্তম দিন পর্যন্ত ইসরায়েল এবং আমেরিকার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দিতে পেরেছিল। কিন্তু ১৬% ক্ষেপণাস্ত্র তাদের প্রতিরক্ষা ভেদ করে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল। এর একটি বড় কারণ হলো ইসরায়েলের গোলাবারুদ বাঁচানোর কৌশল এবং ইরানের উন্নত অস্ত্রের ব্যবহার।
কেন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল?
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি, সামরিক কমান্ডার এবং অন্যান্য সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করে। এর জবাবে ইরান তেল আবিব এবং হাইফার মতো শহরগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে। এই যুদ্ধে পরে আমেরিকাও যোগ দেয় এবং তারা বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। আমেরিকা ইরানকে তাদের ইউরেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট ক্ষমতা বন্ধ করার দাবি জানায়, যা ইরান প্রত্যাখ্যান করে। ইরান দাবি করে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, যখন আমেরিকা এবং ইসরায়েল এটিকে অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা বলে মনে করে।
যুদ্ধবিরতি ও দাবি
যুদ্ধের পর উভয় দেশই বিজয়ের দাবি করে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়, কিন্তু ইরান এরপরও ইসরায়েলে হামলা চালায়, যার ফলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন যে, তারা ইরানের পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি দূর করেছেন, যেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই এটিকে নিজেদের বিজয় বলে দাবি করেন।