৭০০০ কিমি দীর্ঘ এই নদী ৯টি দেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে, তবু একটিও সেতু নেই! কারণ জানলে চমকে যাবেন!

পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীগুলির মধ্যে অন্যতম অ্যামাজন নদী, যা প্রায় ৭০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং নয়টি দেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। তবুও, এই বিশাল নদীর উপর আজও একটিও সেতু নির্মিত হয়নি। এটি শুনতে কিছুটা রহস্যময় এবং বিস্ময়কর লাগলেও, এর পিছনে যেমন প্রযুক্তিগত কারণ রয়েছে, তেমনই রয়েছে প্রাকৃতিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর কিছু দিক।
অ্যামাজন নদীর বিস্তার ব্রাজিল থেকে শুরু হয়ে পেরু, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম এবং ফ্রেঞ্চ গায়ানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পুরো অঞ্চলটিকে অ্যামাজন বেসিন বলা হয় এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম বৃষ্টিপ্রধান বন। এই এলাকা এতটাই ঘন এবং বিস্তৃত যে এখানে রাস্তা তৈরি করাই একটি বিশাল কাজ, আর সেতু নির্মাণ করা প্রকৃতির উপর আক্রমণ বলে মনে করা হবে। নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষের জীবনধারা আজও ঐতিহ্যবাহী; নৌকা এবং ফেরি তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের দৈনন্দিন জীবন ও চলাচল নদীর উপর নির্ভরশীল, সেতুর উপর নয়। তাই সেতু নির্মাণ কেবল প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটি প্রযুক্তিগত বা পরিবেশগত প্রশ্নে পরিণত হয়।
এছাড়াও, অ্যামাজন নদীর প্রশস্ততা কিছু জায়গায় ১০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত, যা এর উপর সেতু নির্মাণকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং প্রযুক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। এর সাথে, অ্যামাজন অঞ্চলে প্রায়শই বন্যা হয় এবং মাটি ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়, যা স্থিতিশীল নির্মাণকে আরও কঠিন করে তোলে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো পরিবেশ। অ্যামাজন জঙ্গলকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলা হয়, কারণ এটি প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করে এবং কার্বন শোষণ করে। এখানে যদি সেতু নির্মাণের জন্য বড় আকারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, তবে এর সরাসরি প্রভাব জঙ্গল, সেখানকার প্রজাতি এবং বৈশ্বিক জলবায়ুর উপর পড়তে পারে। এই কারণেই, অনেক সরকার এবং স্থানীয় সম্প্রদায় এই ধরনের কোনো প্রকল্পকে অনুমতি দেয়নি। অ্যামাজন নদী কেবল একটি নদী নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। এর পার্শ্ববর্তী মানুষ এবং প্রকৃতির সম্পর্ক এতটাই গভীর যে বিজ্ঞান এবং উন্নয়নও এর কাছে নতি স্বীকার করেছে। এই কারণেই, আজ পর্যন্ত এই বিশাল নদীর উপর একটিও সেতু নেই, এবং সম্ভবত ভবিষ্যতেও থাকবে না।