ভারতীয় পরিবারগুলোর কমছে সঞ্চয়, বাড়ছে ঋণের বোঝা! এর কারণ কী?

ভারতীয় পরিবারগুলোর কমছে সঞ্চয়, বাড়ছে ঋণের বোঝা! এর কারণ কী?

ভারতীয় পরিবারগুলোর সঞ্চয়ের ওপর ঋণের বোঝা বাড়ছে। যদি ঋণ “প্রয়োজন” এর পরিবর্তে “চাহিদা” পূরণের জন্য বাড়তে থাকে, তাহলে অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হতে পারে। তবে, সুদের হার কমা, গ্রামীণ আয় বৃদ্ধি এবং সরকারি ছাড়ের কারণে কিছু স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতীয় পরিবারগুলোর সঞ্চয় কমছে এবং ঋণের বোঝা বাড়ছে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মানুষ এখন সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে। জুন ২০২৪-এ গৃহ ঋণের (Home Loan) ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্ব ছিল ২%, যেখানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্ব ছিল মাত্র ০.৯%। শিক্ষা ঋণের (Education Loan) ক্ষেত্রেও সরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে (বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ২% এর বিপরীতে ৩.৬%)। ক্রেডিট কার্ড ঋণে সরকারি ব্যাংকগুলোর আধিপত্য (১২% অংশীদারিত্ব) রয়েছে, যদিও অন্যান্য খুচরো ঋণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এগিয়ে গেছে।

অভ্যন্তরীণ ঋণের উল্লম্ফন, সঞ্চয় রেকর্ড সর্বনিম্ন
গত এক দশকে অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপির ২৬% থেকে বেড়ে ৪১.৯% (ডিসেম্বর ২০২৪) হয়েছে। একই সাথে, পরিবারগুলোর সঞ্চয় টানা তৃতীয় বছরের মতো কমে জিডিপির ১৮.১% এ নেমে এসেছে, যা ২০১৪-১৫ সালের (৩২.২%) তুলনায় অনেক কম। করোনার পর এই প্রবণতা আরও বিপজ্জনক হয়েছে। ২০২৩ সালে নিট অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ৪৭ বছরের সর্বনিম্ন স্তরে (জিডিপির ৫.৩%) পৌঁছেছে।

ঋণ নেওয়ার ধরণ: প্রয়োজন নয়, ‘চাহিদা’র জন্য ঋণ
পার্সোনাল লোন শীর্ষে: ব্যাংকগুলোর ৩২.৭% ঋণ এখন পার্সোনাল লোন, যা কৃষি ও শিল্প খাতের চেয়ে বেশি। ২০১৩-১৪ থেকে ২০২৪-২৫ এর মধ্যে এটি দ্বিগুণ হয়েছে।

ভোগের জন্য ঋণ: মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের ৫৪.৯% নন-হাউজিং খুচরো ঋণ (ক্রেডিট কার্ড, গোল্ড লোন), যা কেবল খরচের জন্য নেওয়া হচ্ছে।

অপ্রয়োজনীয় ঋণ: বিবাহ, স্বাস্থ্য বা ব্র্যান্ডেড জিনিস কেনার জন্য ঋণ গ্রহণকারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে।

পরিবারগুলো কেন ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে?
১. মুদ্রাস্ফীতির চাপ: খাদ্যদ্রব্যের, বিশেষ করে তেল (১৭.৪%) এবং ফল (১৩.৮%) এর দাম আকাশচুম্বী।
২. আয় না বাড়া: গ্রামীণ এলাকায় মজুরি বেড়েছে (৬.১%), কিন্তু শহরাঞ্চলে আয় স্থবির।
৩. জীবনযাত্রার পরিবর্তন: “ভালো জীবনযাপন” এর আকাঙ্ক্ষায় মানুষ ভবিষ্যতের চিন্তা না করে ঋণ নিচ্ছে।

এটি কি অর্থনৈতিক ঝড়ের পূর্বাভাস?
বিপজ্জনক সংকেত: অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপির ৬০% এর উপরে পৌঁছালে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বছরে ০.১% কমতে পারে। কম সিভিল স্কোরযুক্ত ব্যক্তিদের ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি: এসবিআই (SBI) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের অভ্যন্তরীণ ঋণ অন্যান্য উদীয়মান দেশগুলোর (৪৯.১%) তুলনায় এখনও কম (৪২%)। বেশিরভাগ ঋণ “প্রাইম কোয়ালিটি” ঋণগ্রহীতাদের (বাড়ি/গাড়ি ঋণ) দেওয়া হচ্ছে।

গ্রামে আশা, শহরে উদ্বেগ
গ্রামীণ ভারতে মজুরি বৃদ্ধি এবং ভালো ফসলের কারণে চাহিদা বেড়েছে। গ্রামীণ ভোক্তাদের আস্থা “নিরপেক্ষ” (১০০ পয়েন্ট) এর কাছাকাছি, কিন্তু শহরাঞ্চলে মনোভাব এখনও নেতিবাচক।

সরকার এবং আরবিআই-এর পদক্ষেপ
সুদের হার কমেছে: আরবিআই রেপো রেট ০.৫০% কমিয়ে ৫.৫% করেছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ঋণের বোঝা কিছুটা কমবে।
২০২৫ সালের বাজেটে স্বস্তি: মাসিক আয় ₹১ লাখ পর্যন্ত হলে আয়কর থেকে ছাড়। বেতনভোগীদের জন্য ছাড়ের সীমা ₹১২.৭৫ লাখ করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *