মহাকাশে চীনের বাড়বাড়ন্ত! ভারতের জন্য কি বিপদ ঘনিয়ে আসছে?

মহাকাশে চীনের বাড়বাড়ন্ত! ভারতের জন্য কি বিপদ ঘনিয়ে আসছে?

মহাকাশ প্রতিযোগিতা এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, এবং এই দৌড়ে চীন অত্যন্ত আগ্রাসীভাবে এগিয়ে চলেছে। যেখানে আমেরিকা চীনের এই দ্রুত বর্ধনশীল কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেখানে চীন নিজেকে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা দেশ বলে দাবি করছে। তবে বাস্তবতা হলো, গত কয়েক বছরে চীন এমন অনেক প্রযুক্তি তৈরি করেছে যা সরাসরি সামরিক কৌশলগত কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। চীন কীভাবে মহাকাশ খাতে একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

চীনের মহাকাশ সামরিকীকরণ কৌশল
১. বাইডু (BeiDou): চীনের নিজস্ব GPS সিস্টেম
চীন আমেরিকান GPS সিস্টেমের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজস্ব বাইডু নেভিগেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এতে ৬০টিরও বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে এবং এটি ২০২০ সাল থেকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর। বাইডু শুধুমাত্র বেসামরিক ব্যবহারের জন্য নয়, এটি চীনা সেনাবাহিনীকে নির্ভুল দিকনির্দেশনা, অবস্থান নির্ণয় এবং ক্ষেপণাস্ত্র নির্দেশনার মতো পরিষেবাও দেয়। বিশেষভাবে, এই সিস্টেমটি আমেরিকার বৈশ্বিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের দেশগুলিতে।

২. লো-আর্থ অরবিট ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক – ‘চাইনিজ স্টারলিঙ্ক’
স্পেসএক্স-এর স্টারলিঙ্কের মতো চীনও তার নিজস্ব G60 স্টারলিঙ্ক বা ‘কিয়ানফান’ নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। এর লক্ষ্য হলো ১৪,০০০ উপগ্রহের একটি ব্রডব্যান্ড সিস্টেম তৈরি করা, যার মাধ্যমে চীন ডিজিটাল যোগাযোগে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে নেটওয়ার্কটি সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই নেটওয়ার্কটি বিশেষ করে যুদ্ধের সময় ড্রোন এবং সামরিক ইউনিটগুলির নিরাপদ যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।

৩. ৫১০টিরও বেশি গুপ্তচর উপগ্রহ
চীনের কাছে বর্তমানে প্রায় ৫১০টি ISR (গোয়েন্দা, নজরদারি, রিকনসান্স) সক্ষম স্যাটেলাইট রয়েছে। এই সংখ্যা চীনের মোট ১,০০০+ স্যাটেলাইটের অর্ধেকেরও বেশি। এই উপগ্রহগুলি স্থল, সমুদ্র এবং মহাকাশে নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকগুলি ‘ইয়াওগান’ রিমোট সেন্সিং উপগ্রহ, যা অত্যন্ত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নজরদারি করতে সক্ষম।

৪. উপগ্রহ ধরার রোবোটিক অস্ত্র
চীনের শিঝিয়ান-১৭ উপগ্রহ নিয়ে আমেরিকার উদ্বেগ অনেক বেড়ে গেছে কারণ এতে রোবোটিক হাত লাগানো আছে। এই অস্ত্রগুলি অন্যান্য উপগ্রহকে ধরতে বা ক্ষতি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রযুক্তি ‘স্যাটেলাইট জ্যামিং’ এবং স্পেস ইন্টারসেপশনের মতো সরঞ্জামগুলির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হচ্ছে।

৫. মহাকাশে জ্বালানি ভরা – নতুন দিক
চীন এখন মহাকাশে একটি উপগ্রহ থেকে অন্যটিতে জ্বালানি ভরার মিশন চালু করতে চলেছে। এই প্রযুক্তি খুব কম দেশের কাছে আছে এবং এর মাধ্যমে মহাকাশ মিশনগুলির দীর্ঘায়ু এবং পুনঃব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত হয়। মার্কিন সংস্থাগুলি এর উপর কড়া নজর রাখছে কারণ এটি চীনকে দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ আধিপত্যে এগিয়ে দিতে পারে।

৬. অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র: মহাকাশে হামলা
২০০৭ সালে চীন একটি প্রত্যক্ষ-আরোহণ (Direct-Ascent) অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি নিষ্ক্রিয় আবহাওয়া উপগ্রহকে সরাসরি লক্ষ্য করে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই ঘটনাটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে চীন এখন মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতিতেও পিছিয়ে নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *