গ্রিসকে S-400 ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রের প্রস্তাব ভারতের! তুর্কিতে হুলস্থুল, পাকিস্তানের সাহায্য করায় প্রতিশোধ দাবি
তুর্কি মিডিয়া দাবি করেছে যে ভারত গ্রিসকে ‘লং রেঞ্জ ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল’ (LR-LACM) এর একটি “অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব” দিয়েছে। এর অর্থ হল, ভারত ও গ্রিসের মধ্যে LR-LACM ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গোপনে আলোচনা চলছে, যা তুর্কির জন্য এক বড় বিপদ সংকেত। তুর্কির TRHaber-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রিসের সঙ্গে ভারতের LR-LACM ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে এই আলোচনাকে তুর্কির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, “ভারতের এই প্রস্তাব গ্রিসের সঙ্গে তার ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সম্পর্ক এবং সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় পাকিস্তানকে তুর্কির সমর্থনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।” যদিও, এখনও পর্যন্ত নতুন দিল্লি বা এথেন্সের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, তুর্কি এই ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতা এবং পাল্লা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভীত। DRDO দ্বারা উন্নত এই ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের সাফল্য ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতাকে বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতের এই LR-LACM ক্ষেপণাস্ত্র ১,০০০ থেকে ১,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করতে পারে এবং প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এটিও ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই শত্রুদের রাডার এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
কেন LR-LACM ক্ষেপণাস্ত্র থেকে ভীত তুর্কি?
LR-LACM ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বিপজ্জনক বৈশিষ্ট্য হলো এর ‘টেরেইন-হাগিং ফ্লাইট পাথ’, অর্থাৎ মাটি থেকে অনেক কম উচ্চতায় উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা, যার ফলে এটি শত্রুর রাডার এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে সহজেই ফাঁকি দিতে পারে। এর এই দুর্দান্ত শক্তিই তুর্কির জন্য এটিকে একটি উদ্বেগের কারণ করে তুলেছে। তুর্কি S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এমন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দেওয়া। যদিও তুর্কি এখনও S-400 সক্রিয় করেনি এবং তারা দেশীয় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করছে, তবে এখনও পর্যন্ত তারা খুব বেশি সাফল্য পায়নি। তারা S-400 সক্রিয় করেনি, কারণ তারা F-35 ফাইটার জেটের জন্য আমেরিকার সাথে চুক্তি করছে।
তুর্কি মিডিয়ার মতে, গ্রিস যদি ভারতের কাছ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র অর্জন করে, তবে এটি এথেন্সকে তুর্কির সংবেদনশীল স্থানগুলোতে নির্ভুল আক্রমণ করার ক্ষমতা দিতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র মোবাইল লঞ্চার এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর ৩০টিরও বেশি জাহাজে লাগানো উল্লম্ব লঞ্চ সিস্টেম থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। TRHaber আরও বলেছে যে, এই ক্ষেপণাস্ত্র তুর্কির S-400 এর মতো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দিতে পারে। এটি আঙ্কারার (তুর্কির রাজধানী) উদ্বেগ বাড়িয়েছে, বিশেষত যদি গ্রিস এটি মোতায়েন করে।
পাকিস্তানের সাহায্য করার ‘প্রতিশোধ’
এছাড়াও, TRHaber-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, ভারত ও গ্রিসের মধ্যে সম্প্রতি প্রতিরক্ষা আলোচনা বেড়েছে। এই প্রসঙ্গে গত মাসে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এ.পি. সিং এথেন্স সফর করেন এবং গ্রিক বিমানবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডিমোস্টেনিস গ্রিগোরিয়াদিসের সাথে দেখা করেন। এই সাক্ষাৎ এমন এক সময়ে হয়েছিল যখন ভারত এথেন্সে অনুষ্ঠিত DEFEA-25 প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে LR-LACM প্রদর্শন করেছিল। যদিও এই সাক্ষাৎকারে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি, তবে তুর্কি মিডিয়া এটিকে প্রতিরক্ষা চুক্তির দিকে একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখেছে। তুর্কি আরও দাবি করেছে যে, ভারত-গ্রিসের এই সম্ভাব্য চুক্তি ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ তুর্কির পাকিস্তানকে দেওয়া সাহায্যের প্রতিশোধ হতে পারে।
TRHaber এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তাবকে ভারতের আঞ্চলিক কৌশলের অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২০২৩ সালে গ্রিস এবং ২০২৫ সালে সাইপ্রাস সফরেরও উল্লেখ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এই সফরগুলি ভারত, গ্রিস এবং সাইপ্রাসের মধ্যে তুর্কির প্রভাব কমাতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ইঙ্গিত। তারা আরও বলেছে যে, এর ফলে সাইপ্রাসের বন্দরগুলির কাছে ভারতীয় নৌবাহিনীর কার্যকলাপ বাড়তে পারে। তুর্কি মিডিয়ার মতে, গ্রিস এবং সাইপ্রাসের সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুর্কির প্রভাবকে ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে একটি সুচিন্তিত উদ্যোগ। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে সাইপ্রাসের বন্দরগুলিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর উপস্থিতি বাড়তে পারে, যা তুর্কির সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।