J-35 স্টেলথ ফাইটার চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, ইসলামাবাদ কেন পিছু হটতে বাধ্য হলো?

যে চীনা যুদ্ধবিমান নিয়ে পাকিস্তান একসময় গর্ব করে বিশ্বকে দেখিয়েছিল, এখন তা নীরবে বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল যে পাকিস্তানি পাইলটরা J-35 স্টেলথ ফাইটার জেটের জন্য বেইজিংয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং ৪০টি জেটের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু এখন, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই পুরো বিষয়টিকে “মিডিয়ার গুজব” বলে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “কিছুই ঘটছে না।” এই আকস্মিক পিছু হটা একটি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে – কী পাকিস্তানকে চুক্তি থেকে সরে আসতে বাধ্য করলো?
এটি কেবল একটি যুদ্ধবিমানের বিষয় নয়; এটি বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির একটি বিপজ্জনক জাল – চীনের কঠোর শর্ত, আমেরিকার সতর্কতা এবং পাকিস্তানের দ্বৈত কৌশল। এই পুরো ঘটনাটি প্রকাশ করে যে পাকিস্তান ক্রমবর্ধমানভাবে সামরিকভাবে দেউলিয়া এবং কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে টানাপোড়েনে আটকা পড়ে আছে।
মার্কিন চাপ নাকি বেইজিংয়ের নজরদারি?
পাকিস্তানি সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গোপন বৈঠক করার পর ইসলামাবাদের চীনের প্রতি উষ্ণতা কমতে শুরু করে। ওয়াশিংটন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল – যদি পাকিস্তান J-35-এর মতো উচ্চ-প্রযুক্তি সম্পন্ন চীনা অস্ত্র কেনা নিয়ে এগোয়, তবে বিদ্যমান সমস্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হবে। এর মধ্যে F-16-এর রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ সবই অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অন্যদিকে, চীন এমন একটি শর্ত আরোপ করেছিল যা পাকিস্তানকে হতবাক করে দিয়েছে – বেইজিং পাকিস্তানি মাটিতে J-35-এর সমস্ত অপারেশনের সরাসরি তদারকি চেয়েছিল, যেমনভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে তার F-16 সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করে। এর মানে হলো পাকিস্তানি ভূখণ্ডে একটি চীনা সামরিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এটি কেবল আমেরিকানদের ক্ষোভই বাড়াবে না, বরং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলবে। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই তার F-16s-এর উপর মার্কিন নজরদারির অনুমতি দিয়েছে, এবং চীনা নজরদারিতে সম্মত হওয়া মানে উভয় পরাশক্তিকে তার বিমানঘাঁটির ভিতরে পাহারায় দাঁড়ানোর আমন্ত্রণ জানানো।
চীনের “অলৌকিকতা”র চড়া মূল্য
সূত্র থেকে জানা যায়, চীন পাকিস্তানকে বিশাল ছাড় দিয়ে প্রলুব্ধ করেছিল – ৪০টি J-35 অর্ধেক দামে PL-17 ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বিশাল প্যাকেজ সহ প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এর লুকানো খরচ ছিল অনেক বেশি: বহরের সম্পূর্ণ নজরদারি এবং সমস্ত অপারেশনাল বিবরণ সরাসরি বেইজিংয়ের সাথে বাধ্যতামূলকভাবে ভাগ করে নেওয়া। পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দ্রুতই বিপদের ঘণ্টা বাজান – এমন পদক্ষেপ F-16 এবং JF-17-এর মতো বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মগুলি সম্পর্কে সংবেদনশীল তথ্য চীনের কাছে প্রকাশ করতে পারে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, যার মধ্যে আইএমএফ ঋণ স্থগিত এবং FATF কালো তালিকায় সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনও অন্তর্ভুক্ত।
পাকিস্তান কি এখন আবার আমেরিকার কোলে ফিরছে?
খাজা আসিফের বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে পাকিস্তান এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি নতুন চুক্তির সন্ধান করছে, উন্নত F-16 এবং AIM-120C এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র চাইছে। মূলত, পাকিস্তান তার পুরানো কৌশল পুনর্ব্যবহার করছে বলে মনে হচ্ছে – চীনের চুক্তিগুলোতে আগ্রহ দেখিয়ে আমেরিকাকে আরও ভালো শর্ত দিতে প্রলুব্ধ করা। কিন্তু এবার ওয়াশিংটন অনেক বেশি সতর্ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্দেহ করছে যে পাকিস্তান উভয় দিকে খেলছে – চীনা প্রযুক্তি তার বহরে একীভূত করার পাশাপাশি কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে আমেরিকান সমর্থন ব্যবহার করার উদ্দেশ্য রয়েছে।
পাকিস্তানের দ্বৈত খেলা উন্মোচিত
এই সম্পূর্ণ J-35 বিপর্যয় একটি কঠোর সত্য প্রকাশ করে – পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা নীতি আর স্বাধীন নয়। এর আইএমএফ-নির্ভর অর্থনীতি, মার্কিন ছায়া এবং চীনা সুতো এটিকে একটি “কথা বলা রোবট”-এ পরিণত করেছে, যা ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের বোতাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে J-35 স্টেলথ জেট অর্জন করা মানে চীনের কাছে সামরিক নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সারিবদ্ধ হলে JF-17 ব্লক 3-এর মতো চলমান চীনা প্রকল্পগুলো ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পাকিস্তান এখন বিশ্বের সবচেয়ে অস্থির অস্ত্র বাজারে “নো-ম্যানস ল্যান্ড”-এ নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে।
JF-17 কি এখন পাকিস্তানের একমাত্র আশা?
J-35 চুক্তি বাতিল হওয়ায় পাকিস্তান কীভাবে তার বিমানবাহিনীকে আধুনিকীকরণ করবে? বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মনে করেন যে পাকিস্তান JF-17 ব্লক 3 কর্মসূচিতে আরও বেশি মনোযোগ দেবে। কিন্তু সেই প্রকল্পও চীনা সহযোগিতার সাথে জড়িত, এবং এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
পাকিস্তান আর নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণে নেই
J-35 চুক্তি থেকে পিছু হটার মাধ্যমে পাকিস্তান স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে তারা আর সার্বভৌম সামরিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। একদিকে চীনের নজরদারির শেকল; অন্যদিকে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার চাবুক। এর মাঝে আটকা পড়ে আছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী – পুরোপুরি আমেরিকানও নয়, পুরোপুরি চীনাও নয় – কেবল মিডিয়ার গুজব এবং রাজনৈতিক উল্টোপাল্টা।