‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে ভারতের প্রশ্নের মুখে চীন, মুনিবের পাল্টা জবাব ‘ওরা তো বন্ধু!’

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর চীনা সরকার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ আর্মি স্টাফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং সম্প্রতি দাবি করেছিলেন যে, চীন পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে এবং সংঘর্ষের সময় তাদের বিভিন্ন অস্ত্র পরীক্ষা করার জন্য একটি “লাইভ ল্যাব” হিসাবে ব্যবহার করেছে।
এ বিষয়ে এখন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জবাব দিয়েছেন, তবে তার মন্তব্য কিছুটা বিতর্কিত।
মাও নিংয়ের বিবৃতি
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সোমবার (৭ই জুলাই, ২০২৫) একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আপনার প্রশ্নের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই যে চীন এবং পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং উভয় দেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব রয়েছে। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা উভয় দেশের স্বাভাবিক সম্পর্কের অংশ এবং এটি কোনো তৃতীয় দেশের বিরুদ্ধে নয়।”
এর পাশাপাশি, মাও নিং এও বলেছেন যে ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নতি ও বিকাশ হচ্ছে এবং বেইজিং ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার দিকে কাজ করছে। তবে, মাও সেই খবরগুলোও অস্বীকার করেছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে চীন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘাতের পর রাফাল যুদ্ধবিমানের কর্মক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ ছড়ানোর জন্য তাদের দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল। মাও বলেছেন, “আমি এ বিষয়ে অবগত নই।”
জেনারেল রাহুল আর সিংয়ের দাবি
এর আগে, জেনারেল রাহুল আর সিং দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “পাকিস্তান চীনের মুখোশ, এবং চীন তার ঘনিষ্ঠ মিত্রকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি তুরস্কও পাকিস্তানকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।” তিনি এও দাবি করেন যে, ৭-১০ মে-র মধ্যে ভারত তিনটি শত্রুর সঙ্গে লড়ছিল, যার মধ্যে চীনও অন্তর্ভুক্ত ছিল। জেনারেল সিংয়ের মতে, চীন পাকিস্তানের সামরিক অভিযানকে সহায়তা করার জন্য তাদের উপগ্রহ ব্যবহার করেছিল এবং পাকিস্তানকে ভারতের সামরিক কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্যও দিয়েছিল।
পাকিস্তান-চীন সম্পর্কের বিষয়ে মাও নিংয়ের অবস্থান
চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্ক প্রসঙ্গে মাও নিং বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের প্রতিবেশী এবং সবসময় থাকবে। আমরা এটি ভালোভাবে বুঝি যে চীনও এই দুটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। গত কয়েক মাসে চীন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির উপর নিবিড় নজর রেখেছে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আলোচনাকে উৎসাহিত করেছে।” তিনি আরও বলেন যে, চীন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মতভেদগুলি সঠিকভাবে সমাধানের পক্ষে এবং এই দিকে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
অপারেশন সিন্দুর এবং ভারত-পাকিস্তান সংঘাত
‘অপারেশন সিন্দুর’ ভারত ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরের সন্ত্রাসী কাঠামো লক্ষ্য করে শুরু করেছিল, যখন পাকিস্তান পাঠানকোটে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল। এরপর চার দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাত হয়, যা ১০ই মে, ২০২৫ তারিখে একটি সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হয়। ভারত এটিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে দেখেছিল এবং এই সংঘর্ষের সময় অনেক এলাকায় ব্যাপক সামরিক কার্যকলাপ দেখা গিয়েছিল।
তুরস্ক এবং পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা
এদিকে, তুরস্ক ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল, যেখানে তুরস্ক পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান ড্রোন, যুদ্ধজাহাজ এবং বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের সহায়তা প্রদান করেছিল। ভারত এটিকে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত হিসাবে দেখেছিল এবং এই প্রেক্ষাপটে তাদের সামরিক অভিযানের কৌশল তৈরি করেছিল।
চীন কি পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল?
এই প্রশ্নটি এখনও সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট হয়নি। জেনারেল রাহুল আর সিংয়ের দাবির পর চীনের পক্ষ থেকে মাও নিংয়ের বিবৃতি এই দিকে একটি নতুন ভিত্তি স্থাপন করে, যা পাকিস্তান ও চীনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আবারও আলোচনায় নিয়ে আসে। আপাতত, এটি স্পষ্ট নয় যে চীন পাকিস্তানকে কতটা সাহায্য করেছে, তবে এই বিতর্ক অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে।