হার্ভার্ড ছেড়ে সাফল্যের শিখরে, জগৎ বদলে দেওয়া সেই আবিষ্কারক কে?

বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ এবং স্টিভ জবসের মতো কলেজ ড্রপআউটরা অসংখ্য তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা। তাদের যুগান্তকারী আবিষ্কারগুলো বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বহুদূর। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বদেরও একজন অনুপ্রেরণাদাতা ছিলেন? তিনি আর কেউ নন, এডউইন ল্যান্ড, যিনি পোলারয়েড ক্যামেরার উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত। তার জীবন এবং কর্ম এমন সব আবিষ্কারে পরিপূর্ণ যা আধুনিক প্রযুক্তি এবং সামরিক ক্ষেত্রকে নতুন দিশা দেখিয়েছিল।

১৯০৯ সালে আমেরিকার ব্রিজপোর্টে জন্মগ্রহণকারী এডউইন ল্যান্ড হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় কলেজ ছেড়ে দেন। নিজের উদ্ভাবনী স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি আলোর মেরুকরণের উপর কাজ শুরু করেন এবং পোলারয়েড ফিল্ম নামক একটি সাশ্রয়ী ফিল্টার আবিষ্কার করেন। ১৯৩২ সালে হার্ভার্ডের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক জর্জ হুইলরাইটের সাথে তিনি ল্যান্ডহুইল রাইট ল্যাবরেটরিজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পোলারাইজিং প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সানগ্লাস ও ফটোগ্রাফিক ফিল্টার তৈরিতে তার সাফল্য তাকে ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সাহায্য করে, যার ফলস্বরূপ ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পোলারয়েড কর্পোরেশন।

পোলারয়েড ক্যামেরার আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে এক চমৎকার গল্প। নিউ মেক্সিকোতে নিজের তিন বছরের মেয়ের ছবি তোলার পর তার তাৎক্ষণিক ছবি দেখার আবদার থেকেই ল্যান্ডের মনে এই ক্যামেরার ধারণা আসে। সেই সময় ছবি ডেভেলপ করতে কয়েকদিন সময় লাগত, যা ল্যান্ডকে তাৎক্ষণিক ছবি তোলার প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করায়। ১৯৪৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি আমেরিকান অপটিক্যাল সোসাইটির সামনে ল্যান্ড ক্যামেরা প্রদর্শন করেন, যা ১৯৪৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসে। প্রথম দফায় তৈরি মাত্র ষাটটি ইউনিট কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়, যা পোলারয়েড ক্যামেরার অভাবনীয় সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়। এডউইন ল্যান্ডের উদ্ভাবনী মানসিকতা এবং নিরলস পরিশ্রম তাকে থমাস এডিসন ও এলিহু থমসনের থেকেও বেশি সংখ্যক পেটেন্টের অধিকারী করেছিল। ১৯৯১ সালের ১ মার্চ এই কিংবদন্তি ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *