আনারকলির কবর পাকিস্তানে কেন, ভালোবাসার পরিণতি কি ছিল খুন?

মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম ও নর্তকী আনারকলির প্রেমকাহিনী ভারতীয় উপমহাদেশে এক কিংবদন্তি। বহুল চর্চিত এই কাহিনীকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্র, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ‘মুঘল-এ-আজম’। এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে, আনারকলিকে নাকি সম্রাট আকবরের নির্দেশে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল। যদিও একসময় এটিকে শুধুই কল্পকাহিনী ভাবা হতো, সময়ের সাথে সাথে অনেক ঐতিহাসিক প্রমাণ মিলেছে যা এই প্রেমকাহিনীর সত্যতাকে সমর্থন করে। ঐতিহাসিকদের মতে, আনারকলির আসল নাম ছিল নাদিরা বেগম, যদিও কেউ কেউ তাকে শরাফুন্নিসা নামেও অভিহিত করেন। তিনি ইরানের একদল ব্যবসায়ীর সাথে তৎকালীন মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী লাহোরে এসেছিলেন। তার রূপের খ্যাতি দ্রুতই আকবরের কানে পৌঁছায় এবং তিনি নাদিরাকে দরবারে ডেকে পাঠান। নাদিরা’র নৃত্যশৈলী আকবরকে মুগ্ধ করে এবং তিনি তাকে ‘আনারকলি’ নাম দিয়ে তার সবচেয়ে প্রিয় দাসী হিসেবে নিযুক্ত করেন।

তবে ব্রিটিশ পর্যটক উইলিয়াম ফিঞ্চের মতে, আনারকলি ছিলেন আকবরের একজন স্ত্রী এবং দানিয়াল নামের এক পুত্রের জননী। দাসী হওয়া সত্ত্বেও শাহজাদা সেলিম আনারকলির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই খবর আকবরের কাছে পৌঁছালে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। বহু চেষ্টা করেও আকবর তাদের সম্পর্ক ভাঙতে পারেননি, ফলে শেষমেশ তিনি আনারকলিকে জীবন্ত কবর দেওয়ার নির্দেশ দেন। কথিত আছে, লাহোরের কেল্লার দেওয়ালে আনারকলিকে চুন-সুরকি দিয়ে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল। যদিও কিছু গল্প অনুযায়ী, সেই দেওয়ালে একটি গোপন সুড়ঙ্গ ছিল যার মাধ্যমে আনারকলি রক্ষা পেয়েছিলেন। তবে সৈয়দ আব্দুল লতিফ তার ‘তারিখ-ই-লাহোর’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, আনারকলির কবরের উপর ১৫৯৯ সালটি খোদাই করা আছে, যা তার মৃত্যুর বছর নির্দেশ করে। আকবরের মৃত্যুর পর সেলিম যখন ‘জাহাঙ্গীর’ নামে সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন তিনি আনারকলির দেহাবশেষ উদ্ধার করে তার জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন সমাধি নির্মাণ করেন। এই সমাধি আজও পাকিস্তানের লাহোরে বিদ্যমান এবং এটি আনারকলির মাজার নামেই পরিচিত। জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী’-তেও এই মাজারের উল্লেখ পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *