ভূরাজনীতির জটিল সমীকরণে দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা চিরস্থায়ী নয়, বরং স্বার্থই নির্ধারণ করে সম্পর্কের গতিপথ। আজ রাশিয়া ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও, অতীতে তারা চারবার ভারত আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। ঐতিহাসিক সূত্র অনুসারে, আঠারো শতকে ব্রিটিশদের ভারতে ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেখে রাশিয়া উৎসাহিত হয়েছিল উপমহাদেশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য। তবে, এই পরিকল্পনাগুলো কখনোই সফল হয়নি। ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে—রাশিয়া কি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতকে মুক্ত করতে চেয়েছিল, নাকি নিজেদের উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে এগিয়েছিল?

আঠারো শতকে রাশিয়ার জার প্রথম পল ব্রিটিশদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের সঙ্গে যৌথভাবে ভারত অভিযানের পরিকল্পনা করেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, “ফরাসি সেনারা দানিয়ুব নদী ও কৃষ্ণসাগর পেরিয়ে কাজাখিস্তানে রাশিয়ান সেনাদের সঙ্গে মিলিত হবে, এবং সেখান থেকে যৌথভাবে ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।” পরিকল্পনা ছিল ৭০,০০০ সেনা নিয়ে ভারত অভিমুখে যাত্রা করার। কিন্তু নেপোলিয়ন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে প্রথম পল একাই ২২,০০০ সেনা নিয়ে অভিযান শুরু করেন। দীর্ঘ পথে রসদের অভাবে অধিকাংশ সেনার মৃত্যু হয়, এবং পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এরপর প্রথম পলের হত্যা এবং নতুন জার আলেকজান্ডার প্রথমের শাসনে টিলসিট চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় ভারত অভিযানের প্রস্তাব উঠলেও, ব্রিটিশদের কূটনৈতিক তৎপরতায় পারস্য ও আফগানিস্তানের প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যায়।

উনিশ শতকে রাশিয়ার জেনারেল আলেকজান্ডার ডুহামেল এবং স্টিপ্যান খ্রুলেভ পৃথকভাবে ভারত অভিযানের প্রস্তাব দেন। ডুহামেল বলেছিলেন, “ভারতবাসীরা ব্রিটিশ শাসনে অসন্তুষ্ট; এটাই সঠিক সময়।” কিন্তু ক্রিমিয়ান যুদ্ধের কারণে এই পরিকল্পনাগুলোও ব্যর্থ হয়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সম্পদ ও উষ্ণ জলের বন্দরে প্রবেশাধিকার। ব্রিটিশদের কূটনৈতিক দক্ষতা ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাশিয়ার এই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।