বারাণসীর এই মন্দির কেন হেলে আছে? রহস্য জানলে চমকে যাবেন

পিসার মিনারের থেকেও বেশি হেলে ৯০০ বছরের পুরোনো এক মন্দির, লোকচক্ষুর আড়ালে কেন এই রত্নেশ্বর মহাদেব?
গঙ্গার কোলে রহস্যে মোড়া বারাণসীর রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির, যা স্থানীয়দের কাছে ‘কাশী করবত’ নামে পরিচিত, তার ক্রমবর্ধমান হেলে থাকার কারণে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। ৯ ডিগ্রির বেশি হেলে থাকা এই মন্দিরটি ইতালির বিখ্যাত পিসার হেলানো মিনারের চেয়েও দ্বিগুণ বেশি হেলে রয়েছে, অথচ এর পরিচিতি সীমিত।
কিংবদন্তি আর স্থাপত্যের মেলবন্ধন
মানিকর্ণিকা ঘাটের পাশে অবস্থিত এই মন্দিরের হেলান অবস্থা স্থাপত্যগত বিস্ময়ের পাশাপাশি জন্ম দিয়েছে নানা কিংবদন্তির। একটি প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, রাজা মানসিংহের এক ভৃত্য তাঁর মা রত্নাবাঈয়ের নামে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দির তৈরি হওয়ার পর সেই ভৃত্য গর্ব করে বলেন, “মায়ের ঋণ শোধ করলাম।” এই কথা শুনেই নাকি দেব অসন্তোষ হয় এবং মন্দিরটি হেলে যায়। এর মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে মায়ের ঋণ কখনো শোধ হয় না, কেবল বহন করা যায়।
আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, ইন্দোরের রানি অহল্যাবাঈ হোলকারের সেবিকা রত্নাবাঈ নিজের নামে মন্দির তৈরি করান, যা রানির ক্রোধের কারণ হয় এবং তাঁর অভিশাপেই মন্দির হেলে যায়।
অলৌকিক ডুবো পূজা
বর্ষা ও শীতকালে গঙ্গার জলস্তর বাড়লে মন্দিরের গর্ভগৃহ সম্পূর্ণভাবে ডুবে যায়। সেই সময় পুরোহিতরা জলে দাঁড়িয়েই পূজা সম্পন্ন করেন অথবা পূজা স্থগিত থাকে। এই অলৌকিক দৃশ্য এক ভিন্ন আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি করে। স্থানীয় মাঝি রজনাথ তিওয়ারি আক্ষেপ করে বলেন, বিদেশি পর্যটকরা পিসার মিনার দেখতে ভিড় করেন, অথচ দেশের এই বিস্ময়কর স্থাপত্য থেকে বঞ্চিত থাকেন।
ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ
ইতিহাসবিদদের মতে, মন্দিরটি নাগর শৈলীতে নির্মিত এবং ১৮৬০ সালের পর থেকে এটি হেলতে শুরু করে থাকতে পারে। তবে, এর সঠিক নির্মাণকাল এবং হেলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো অজানা। কারণ যাই হোক না কেন, রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দির আজও গঙ্গার তীরে, লোকচক্ষুর অন্তরালে এক আধ্যাত্মিক ঋণের চিরন্তন স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।