ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) ২০২৫ সালের এশিয়া কাপে ভারতীয় দলের অংশগ্রহণ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা বিসিসিআই এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)-কে মৌখিকভাবে জানিয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিসিআই আগামী মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিতব্য মহিলা ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ এবং সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত পুরুষ এশিয়া কাপ থেকেও নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবে।

বিসিসিআই-এর সিদ্ধান্তের কারণ
বিসিসিআই-এর সূত্র জানায়, এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য পাকিস্তান ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা। বর্তমানে এসিসি-র প্রধান পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি, যিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যানও। বিসিসিআই-এর এক সূত্র বলেন, “একজন পাকিস্তানি মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন টুর্নামেন্টে ভারতীয় দল খেলতে পারে না। এটি দেশের জনগণের আবেগের সঙ্গে জড়িত। আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে আছি।” পাহলগামে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে, যা এই সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করেছে।

পুরুষ এশিয়া কাপের উপর প্রভাব
বিসিসিআই-এর এই সিদ্ধান্ত পুরুষ এশিয়া কাপের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভারত ছাড়া এই টুর্নামেন্টের আকর্ষণ এবং আর্থিক লাভ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ব্রডকাস্টারদের জন্য বিশাল আয়ের উৎস এবং দর্শকদের জন্য উচ্চ-ভোল্টেজ নাটক। এসিসি-র মিডিয়া রাইটস চুক্তি, যার মূল্য ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, প্রতি সংস্করণে কমপক্ষে দুটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উপর নির্ভর করে। ভারতের অনুপস্থিতি এই চুক্তির আর্থিক কাঠামোকে বিপর্যস্ত করতে পারে।

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
২০১২-১৩ সালের পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট খেলেনি। তাদের মুখোমুখি হওয়া কেবল আইসিসি এবং এসিসি ইভেন্টে সীমাবদ্ধ। পাহলগাম হামলার পর ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেলার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গুলী এবং বর্তমান কোচ গৌতম গম্ভীর পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার বিরোধিতা করেছেন। বিসিসিআই-এর সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এশিয়া কাপের ভবিষ্যৎ ও বিকল্প পরিকল্পনা
ভারতের বয়কটের ফলে এশিয়া কাপ পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু সূত্রের মতে, বিসিসিআই এশিয়া কাপের সময়সূচির পরিবর্তে আইপিএল ২০২৫-এর বাকি ম্যাচগুলি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছে, যা পাকিস্তানের আক্রমণের পর স্থগিত হয়েছিল। শ্রীলঙ্কা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তবে ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়া টুর্নামেন্টের আয়োজন কঠিন হবে।