বড়দের পায়ে হাত দেওয়া শুধু প্রথা নয়, এর পেছনে আছে গভীর বৈজ্ঞানিক রহস্য!

বড়দের পায়ে হাত দেওয়া শুধু প্রথা নয়, এর পেছনে আছে গভীর বৈজ্ঞানিক রহস্য!

পায়ে হাত দেওয়া কেবল একটি ঐতিহ্য বা প্রথা নয়, এটি এক ধরনের শক্তি বিজ্ঞান, যা আমাদের ঋষি-মুনিরা অনেক আগেই উপলব্ধি করেছিলেন। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বড়দের পায়ে হাত দেওয়া একটি সাধারণ রীতি, কিন্তু এটি একটি রহস্যময় এবং শক্তি প্রদানকারী আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াও বটে।

পায়ে হাত দেওয়াকে বিনয়ের প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও, এটি জীবনে ইতিবাচক শক্তি, সংস্কার এবং আশীর্বাদ নিশ্চিত করে। কীভাবে, আসুন জেনে নিই।

পায়ে হাত দেওয়া নিয়ে শাস্ত্র কী বলে?
শক্তির স্থানান্তর (Transfer of Energy): বৃহత్పরাশর হোরা শাস্ত্র এবং গরুড় পুরাণে উল্লেখ আছে যে, যখন কেউ শ্রদ্ধাপূর্বক কোনো জ্ঞানী বা বৃদ্ধের চরণ স্পর্শ করেন, তখন তার মধ্যে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয়। এই শক্তি তার মনকে শান্ত করে এবং তার আত্মাকে সাত্ত্বিক করে তোলে।

কর্মশুদ্ধি এবং সংস্কারের পুষ্টি: মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে যে, গুরুজন বা বৃদ্ধের আশীর্বাদ ব্যক্তির পাপ নাশ করে এবং শুভ সংস্কারকে শক্তিশালী করে। পা স্পর্শ করা বিনয়ের চিহ্ন যা অহংকারকে ধ্বংস করে।

চেতনার জাগরণ: যখন কোনো ব্যক্তি শ্রদ্ধা সহকারে চরণ স্পর্শ করেন, তখন তার মস্তিষ্কের তরঙ্গ (Brain Waves) গুরুর শক্তির সঙ্গে সংঘর্ষ করে, যার ফলে মনের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এই ক্রিয়া আধ্যাত্মিক উন্নতির দ্বার খুলে দেয়।

গুরুত্ব স্বীকার এবং আত্মিক আত্মসমর্পণ: উপনিষদ অনুসারে, চরণ স্পর্শ আসলে আত্মার কাছে আত্মার আত্মসমর্পণ। এই ক্রিয়া ব্যক্তিকে গুরুতত্ত্বের সাথে সংযুক্ত করে, যা মোক্ষ লাভের চাবিকাঠি।

মহাভারত: যখন অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের চরণ স্পর্শ করেন
মহাভারতের ভীষ্মপর্ব, অধ্যায় ১১-১২ তে যখন ভগবদ্গীতা শুরু হয়, তখন একটি প্রসঙ্গ আসে যেখানে অর্জুন মোহগ্রস্ত হয়ে যুদ্ধ না করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাকে জ্ঞান দেন। গীতার জ্ঞান লাভের পর অর্জুন ‘করিশ্যে বচনং তব’ বলে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন, যা চরণে প্রণামের প্রতীক।

“হে অচ্যুত! আপনার কৃপায় আমার মোহ নষ্ট হয়েছে, আমি স্মৃতি (স্বধর্ম এবং আত্মস্বরূপের পরিচয়) লাভ করেছি। এখন আমি স্থিরচিত্ত এবং সন্দেহমুক্ত। আমি এখন আপনার আদেশ পালন করব।”

জ্যোতিষ কী বলে?
জ্যোতিষশাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, চরণ স্পর্শ করলে শনি, গুরু এবং চন্দ্রের শুভতা আসে। শনি শৃঙ্খলার এবং বিনয়ের গ্রহ, গুরু জ্ঞানের এবং চন্দ্র মানসিক শান্তির প্রতীক। এই তিনের কৃপা জীবনে ভারসাম্য, বুদ্ধি এবং সৌভাগ্য নিয়ে আসে। ছান্দোগ্য উপনিষদ এবং নারদ সংহিতাতেও পায়ে হাত দেওয়াকে ইতিবাচক থাকার একটি চমৎকার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *