কিডনি বা গলব্লাডারের পাথর; এক সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে… এবং আর ফিরে আসার নাম নেবে না যদি এই ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করেন!

পাথরের রোগ মূত্রতন্ত্র সম্পর্কিত একটি ব্যাধি। প্রস্রাবের সাথে বের হওয়া ক্ষারীয় উপাদান যখন শরীরে কোনো কারণে প্রস্রাবের নালী, কিডনি বা মূত্রাশয়ে আটকে যায়, তখন বাতাসের প্রভাবে তা ছোট ছোট পাথর ইত্যাদির রূপ নেয়।
পাথর ছোট ছোট বালির কণা থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এটি অমসৃণ, মসৃণ, শক্ত, গোলাকার ইত্যাদি আকারে পাওয়া যায়।
পাথর হওয়ার লক্ষণ:
যখন শরীরের কোনো অংশে পাথর তৈরি হয়, তখন রোগীর প্রস্রাব করার সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যেমন – প্রস্রাব আটকে আটকে আসা, প্রস্রাবের সাথে রক্ত বা পুঁজ আসা, লিঙ্গের অগ্রভাগে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি। পাথরের ব্যথার কারণে কখনও কখনও রোগীর বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
পাথর হওয়ার কারণ:
যখন বায়ু মূত্রাশয়ে আসা শুক্রের সাথে প্রস্রাব এবং পিত্তের সাথে কফকে শুকিয়ে দেয়, তখন শরীরে পাথর তৈরি হয়। পাথর হলে রোগীর পেটে ব্যথা হয় এবং তার প্রস্রাবও বন্ধ হয়ে যায়। পাথর রোগ চার প্রকারের হয় – বাতজ, পিত্তজ, কফজ এবং শুক্রজ। যারা সহবাসের সময় বীর্য বের হতে বাধা দেন, তাদের শুক্রজ পাথর রোগ হয়।
পাথর গলানোর ঘরোয়া উপায়:
নিম: নিমের ক্বাথ বানিয়ে পান করলে পেটের পাথর গলে যায় এবং পেটে ব্যথা কমে। নিমের পাতার ২০ গ্রাম ছাই অল্প কিছুদিন ধরে প্রতিদিন ৩ বার জলের সাথে নিলে পাথরে উপকার পাওয়া যায়।
অপামার্গ: ২ গ্রাম অপামার্গের মূল জলের সাথে পিষে নিন। এটি প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় জলের সাথে পান করলে পাথর শেষ হয়ে যায়।
কার্পাস: কার্পাসের মূলের ক্বাথ বানিয়ে পান করলে পেটের পাথর গলে যায় এবং পেট ফোলা বন্ধ হয়ে যায়।
সত্যাশী: সত্যাশীর দুধ এক চতুর্থাংশ থেকে ১ গ্রাম পরিমাণে প্রতিদিন নিলে পাথর শেষ হয়ে যায়।
সজনে: সজনের মূলের ক্বাথ বানিয়ে ঈষদুষ্ণ পান করলে পাথর রোগ ঠিক হয়ে যায়। সজনের সবজি বানিয়ে খেলে কিডনি ও মূত্রাশয়ের পাথর গলে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।
মূলা: ৪০ মিলিমিটার মূলার রসে ৩০ গ্রাম আজমোদ মিশিয়ে পান করলে পাথর গলে যায় এবং মল পরিষ্কার হয়। মূলার পাতার ১০ মিলিমিটার রসে ৩ গ্রাম আজমোদ মিশিয়ে দিনে ৩ বার পান করলে পাথর গলে বেরিয়ে যায়।
কুলথি: ১০ গ্রাম কুলথির ডাল এবং ১০ গ্রাম গোখরুকে একসাথে পিষে নিন এবং ২০০ মিলিমিটার জলে ফেলে ফুটিয়ে নিন। যখন এক চতুর্থাংশ জল অবশিষ্ট থাকবে, তখন এটি ছেঁকে নিন। এটি আধা গ্রাম শিলাজিতের সাথে দিনে তিনবার পান করুন। এতে পেটের গ্যাস শেষ হয় এবং পাথর গলে যায়। কুলথির বীজের চূর্ণ বানিয়ে প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় ৪০ থেকে ৮০ গ্রামের পরিমাণে খেলে সব ধরনের পাথর রোগ ঠিক হয়ে যায়। ৬ গ্রাম কুলথিকে ১২৫ মিলিমিটার জলে অনেকক্ষণ ধরে ফোটান। তারপর জল ছেঁকে তাতে এক চতুর্থাংশ পরিমাণ মূলার রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় পান করলে পাথর গলে নষ্ট হয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর সময় ২৫০ গ্রাম কুলথিকে ৩ লিটার জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই জল ফুটিয়ে ছেঁকে তাতে লবণ, গোলমরিচ, জিরা, হলুদ এবং বিশুদ্ধ ঘিয়ের ফোড়ন দিন। এই ক্বাথ প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় পান করলে প্রস্রাবের জ্বালা, প্রস্রাব ধীরে ধীরে আসা এবং মূত্রাশয়ের পাথর গলে বেরিয়ে যায়।
পাথরচটা (পাথর ফোঁড়া): ১০ গ্রাম পাথরচটা এবং ৫ গ্রাম গোলমরিচ ৫০ মিলিমিটার জলে মিশিয়ে পিষে মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত জলের সাথে খান। এতে কিডনির পাথর গলে বেরিয়ে যায়। ২০ গ্রাম পাথরচটার সবুজ পাতা জলের সাথে মিহি করে পিষে নিন এবং তাতে চিনি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় পান করুন। এই জল সব ধরনের পাথরকে ঠিক করে।
জোয়ান: ৬ গ্রাম জোয়ান প্রতিদিন খেলে কিডনি ও মূত্রাশয়ের পাথর প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়।
আজমোদ: ৩ গ্রাম আজমোদ এবং ১ গ্রাম জবাক্ষারকে মূলার পাতার সাথে পিষে এক কাপ রস বের করে নিন। এক কাপ রস প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত পান করুন। এতে পেটের পাথর গলে যায়।
গোখরূ: ৩ গ্রাম গোখরুর চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়ে ভেড়ার দুধে গুলে নিন। প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় সাত দিন পর্যন্ত এটি পান করলে সব ধরনের পাথর ঠিক হয়ে যায়।
ফিটকিরি: ফিটকিরির ফোলা ৪ গ্রাম প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় মাঠার সাথে নিলে পাথর শেষ হয়ে যায়।
মাঠা: গরুর দুধের মাঠায় ১০ গ্রাম জবাক্ষার মিশিয়ে সেবন করলে পাথর গলে বেরিয়ে যায়।
মেহেদি: ১০ গ্রাম মেহেদির সবুজ পাতা ৫০০ মিলিমিটার জলে ফেলে ফোটান। যখন জল ফুটে ১৫০ মিলিমিটার অবশিষ্ট থাকবে, তখন সেটি ছেঁকে পান করুন। ১৫ দিন ধরে সকালে-সন্ধ্যায় এই জল পান করলে উভয় প্রকারের পাথর গলে বেরিয়ে যায়।
পেঁয়াজ: পেঁয়াজের দুই চামচ রসে মিছরি মিশিয়ে পান করলে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই পাথর গলে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজের রসে চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে পান করলে পাথর কেটে কেটে বাইরে বেরিয়ে যায়। ৫০ মিলিমিটার পেঁয়াজের রস সকালে খালি পেটে প্রতিদিন পান করতে থাকলে কিডনি ও মূত্রাশয়ের (প্রস্রাব জমা হওয়ার স্থান) পাথর টুকরো টুকরো হয়ে বেরিয়ে যায়। পেঁয়াজের ১০-২০ মিলিমিটার তাজা রস দিনে ৩ বার পর্যন্ত ৩ মাস পান করলে কিডনি এবং মূত্রাশয়ের পাথর গলে বেরিয়ে যায় এবং প্রস্রাব পরিষ্কার হয়।
জাম: জামের বীজ শুকিয়ে এবং পিষে চূর্ণ বানিয়ে রাখুন। এর থেকে আধা চামচ চূর্ণ জলের সাথে সকালে-সন্ধ্যায় নিলে কিডনির পাথর নষ্ট হয়ে যায়।
এলাচ: এলাচ, শিলাজিৎ এবং পিপার ৩-৩ গ্রামের পরিমাণে নিয়ে চূর্ণ তৈরি করুন। এই চূর্ণে সামান্য মিছরি মিশিয়ে জলের সাথে প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় খান। এতে কিডনির পাথর গলে বেরিয়ে যায়।
আমের পাতা: আমের পাতা শুকিয়ে মিহি চূর্ণ বানিয়ে রাখুন। প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় এর ২ চামচ চূর্ণ জলের সাথে নিলে কিছুদিনের মধ্যেই পাথর গলে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। আমের তাজা পাতা ছায়ায় শুকিয়ে মিহি করে পিষে নিন এবং ৮ গ্রাম বাসি জলের সাথে সকালে এর ফোঁটা নিন। এতে কিছুদিনের মধ্যেই পাথর গলে নষ্ট হয়ে যায়।