রাতে লিভারের ক্ষতির এই লক্ষণ দেখলে সাবধান!

আধুনিক জীবনযাত্রার দৌড়ে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যস্ততার কারণে লিভারের ক্ষতি আজ একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এর লক্ষণগুলো প্রায়শই রাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বেশিরভাগ মানুষ এই সংকেতগুলোকে উপেক্ষা করে, যা পরে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আসুন জেনে নিই, রাতে প্রকাশ পাওয়া লিভারের ক্ষতির এই লক্ষণগুলো কী এবং কেন এগুলো গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
লিভারের ক্ষতি: কীভাবে শুরু হয়?
লিভার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ ফিল্টার করে, হজমে সাহায্য করে এবং বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত তেল-লবণ, অ্যালকোহল এবং সময় না মেলানো জীবনযাপন এই অঙ্গের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাসগুলো ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস বা এমনকি সিরোসিসের মতো সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
নয়াদিল্লির ফোর্টিস হাসপাতালের হেপাটোলজিস্ট ডা. রাকেশ গুপ্তা বলেন, “আমরা যাকে ছোটখাটো সমস্যা মনে করি, তা প্রায়ই লিভারের ক্ষতির প্রাথমিক সংকেত। রাতে এই লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায়, কারণ তখন শরীর বিশ্রামে থাকে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা পরীক্ষিত হয়।”
রাতের লক্ষণ ১: পেটে ব্যথা
ক্ষতিগ্রস্ত লিভার প্রায়শই রাতে পেটে অস্বস্তি বা ব্যথার কারণ হয়। ফ্যাটি লিভার বা প্রদাহের কারণে লিভারের আকার বেড়ে গেলে পেটে চাপ পড়ে। এই ব্যথা সাধারণত ডান দিকে উপরের অংশে অনুভূত হয় এবং ঘুমের সময় তীব্রতর হতে পারে। ডা. গুপ্তা সতর্ক করে বলেন, “এটি যদি নিয়মিত হয়, তবে অবিলম্বে লিভার ফাংশন টেস্ট করানো উচিত। উপেক্ষা করলে সমস্যা জটিল হতে পারে।”
রাতের লক্ষণ ২: ত্বকে চুলকানি
লিভার যখন বিষাক্ত পদার্থ পরিশোধন করতে ব্যর্থ হয়, তখন রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ত্বকে চুলকানি বা জ্বালার কারণ হয়। এই সমস্যা রাতে বেশি প্রকট হয়, কারণ শরীর তখন বিশ্রামে থাকে এবং ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়ে। বেঙ্গালুরুর একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রিয়া রাও বলেন, “অনেকে এটিকে সাধারণ অ্যালার্জি মনে করেন, কিন্তু ত্বকের এই সমস্যা লিভারের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত হতে পারে।”
রাতের লক্ষণ ৩: মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব
লিভারের কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরে টক্সিন জমে, যা মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা বমির মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। এই লক্ষণগুলো রাতে ঘুমের সময় বা শোয়ার পর বেশি দেখা যায়। ডা. গুপ্তা ব্যাখ্যা করেন, “লিভার যখন হজমে সাহায্য করতে পারে না, তখন রাতের খাবারের পর এই অস্বস্তি বাড়ে। এটি যদি বারবার হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।”
কেন উপেক্ষা করা বিপজ্জনক?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর লিভার রোগে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায়। ভারতে ফ্যাটি লিভার রোগ বাড়ছে, যার অন্যতম কারণ প্রক্রিয়াজাত খাবার ও জীবনযাত্রার অবনতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক লক্ষণগুলো উপেক্ষা করলে সমস্যা চিহ্নিত করতে দেরি হয়, যা চিকিৎসাকে জটিল করে তোলে।
প্রতিরোধের পথ
লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাজা ফল, শাকসবজি, পুরো শস্য এবং পর্যাপ্ত জল পান করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও তেল এড়িয়ে চলা জরুরি। এছাড়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
কী করবেন?
যদি আপনি রাতে এই লক্ষণগুলো লক্ষ্য করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT) এবং আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সমস্যার মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ওষুধে লিভারকে সুস্থ করা যায়।