হাড় দুর্বল হচ্ছে কীভাবে বুঝবেন? কটকট শব্দের কারণ ও সমাধান

হাড় দুর্বল হচ্ছে কীভাবে বুঝবেন? কটকট শব্দের কারণ ও সমাধান

হাড়ের দুর্বলতা সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে দেখা দেয়, তবে আধুনিক জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে কম বয়সেও এই সমস্যা বাড়ছে। হাড় দুর্বল হওয়ার লক্ষণ এবং জয়েন্ট থেকে কটকট শব্দের কারণ সময়মতো চিহ্নিত করে চিকিৎসা না করলে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারে। সিনিয়র অর্থোপেডিক সার্জন ডা. অজয় পানোয়ারের মতে, সঠিক জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
হাড় দুর্বল হওয়ার লক্ষণ:
জয়েন্টে ব্যথা ও অস্বস্তি: হাড় বা জয়েন্টে ক্রমাগত ব্যথা।

বারবার চোট বা ফ্র্যাকচার: ছোট আঘাতে হাড় ভাঙার প্রবণতা।

জয়েন্টে শক্ত ভাব: বিশেষ করে সকালে বা বসার পর উঠতে অসুবিধা।

ধীরে হাড় জোড়া লাগা: ফ্র্যাকচারের পর হাড় জোড়া লাগতে বেশি সময় নেওয়া।

উঠাবসায় সমস্যা: হাঁটা, বসা বা দাঁড়ানোর সময় অসুবিধা।

কটকট শব্দের কারণ:
জয়েন্টের তরলে গ্যাস বুদবুদ: জয়েন্টের সিনোভিয়াল তরলে গ্যাস বুদবুদ তৈরি ও ফাটার কারণে শব্দ হয়।

অস্টিওপোরোসিস: হাড় দুর্বল হলে জয়েন্টে শব্দ বাড়তে পারে।

আর্থ্রাইটিস: জয়েন্টে প্রদাহের কারণে কটকট শব্দ।

মাংসপেশির টান: মাংসপেশিতে টান বা স্ট্রেসের কারণেও শব্দ হতে পারে।

কার্টিলেজের ক্ষয়: জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয় হলে হাড়ের ঘর্ষণে শব্দ হয়।

কী করবেন?
ডাক্তারের পরামর্শ: কটকট শব্দ বা ব্যথা দীর্ঘদিন থাকলে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা, ডেক্সা স্ক্যান বা এক্স-রে করে অস্টিওপোরোসিস বা আর্থ্রাইটিস নির্ণয় করবেন।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:
খাদ্যাভ্যাস: ক্যালসিয়াম (দুধ, পনির, দই) ও ভিটামিন ডি (মাছ, ডিম, সূর্যালোক) সমৃদ্ধ খাবার খান। ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন কে২ (সবুজ শাক, বাদাম) হাড়ের জন্য উপকারী।

ব্যায়াম: ওজন বহনকারী ব্যায়াম (হাঁটা, যোগা, হালকা ওজন উত্তোলন) হাড় মজবুত করে।

ভঙ্গি সংশোধন: সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও হাঁটা জয়েন্টের চাপ কমায়।

সাপ্লিমেন্ট: ডাক্তারের পরামর্শে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি বা কোলাজেন সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টে চাপ বাড়ায়, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: এগুলো হাড়ের ঘনত্ব কমায়।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
যদি কটকট শব্দের সঙ্গে ব্যথা, ফোলা বা জয়েন্টে শক্ত ভাব থাকে।

ঘন ঘন ফ্র্যাকচার বা হাড়ে তীব্র ব্যথা হলে।

উঠাবসায় সমস্যা বা চলাফেরায় অসুবিধা হলে।

প্রতিরোধ ও সতর্কতা: ডা. পানোয়ার জানান, অল্প বয়সে হাড়ের স্বাস্থ্যের যত্ন নিলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক হাড় মজবুত রাখে। কটকট শব্দ সবসময় গুরুতর নয়, তবে এটি আর্থ্রাইটিস বা হাড়ের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন হাড়ের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “নিয়মিত যোগা ও ক্যালসিয়াম আমার জয়েন্টের ব্যথা অনেক কমিয়েছে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *