বিপত্নীক পুরুষের মানসিক লড়াই: দ্বিতীয় বিয়ে না একাকীত্ব, কোন পথে মুক্তি জানালেন মনস্তত্ত্ববিদ!

দীর্ঘদিনের সঙ্গিনীকে হারানোর যন্ত্রণা কতটা গভীর হতে পারে, তা ভুক্তভোগীই জানেন। তবে সমাজে স্বামীহারা নারীর দুঃখ নিয়ে আলোচনা হলেও, স্ত্রীহারা পুরুষের একাকীত্ব প্রায়শই অনুচ্চারিত থেকে যায়। একাত্তর বছর বয়সী সুবিমলবাবু বা অকালে স্ত্রীকে হারানো শৌভিকের মতো অনেকেই নীরবে এই কষ্ট বয়ে বেড়ান। তাঁরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন, কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের চোখের জল ফেলাকে দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। অথচ মনস্তত্ত্বের অধ্যাপিকা নীলাঞ্জনা সান্যাল মনে করেন, বিপত্নীক পুরুষের যন্ত্রণা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি হতে পারে।
অধ্যাপিকা সান্যাল ব্যাখ্যা করেছেন, স্ত্রী-হারা পুরুষের মানসিক কষ্ট বাড়ার অন্যতম কারণ হল তাঁদের একাকীত্ব। নারীরা সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্মে যতটা জড়িত থাকেন, পুরুষরা সাধারণত ততটা পারেন না। স্ত্রী হারানোর পর নারীরা সাংসারিক কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখে দুঃখ ভুলতে চেষ্টা করেন, কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এমন সুযোগ কম থাকে। ফলে সময় কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং যন্ত্রণা আরও গভীরভাবে চেপে বসে। তবে সব বিপত্নীক পুরুষের প্রতিক্রিয়া এক রকম হয় না; এর পেছনে যেমন মানসিক ও সামাজিক কারণ থাকে, তেমনই তাঁদের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যও প্রভাব ফেলে। অল্পবয়সে স্ত্রীকে হারালে, বিশেষ করে যদি স্ত্রীর প্রতি ইতিবাচক মানসিকতা প্রধান থাকে, তবে অনেকেই নতুন করে সঙ্গী খুঁজতে চান না, বরং স্মৃতিরোমন্থন করেই জীবন কাটান।
জীবনসঙ্গীর অভাবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন হলেও, বেঁচে থাকার পথ খুঁজে বের করা জরুরি। নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, বয়স অনুযায়ী পছন্দসই কোনো কাজে বা শখে নিজেকে যুক্ত করলে তা মনকে হালকা করতে পারে। ফটোগ্রাফি, বাগান করা, বই পড়া, গান শোনা, হালকা ব্যায়াম বা প্রাণায়ামের মতো অভ্যাসগুলো মানসিক স্বস্তি দিতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনে কাউন্সেলিং বা জেরিয়াট্রিক কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, যারা জন্মান্তরে বিশ্বাস রাখেন, তারা প্রিয়জনের সঙ্গে পুনরায় দেখা হওয়ার আশায় বাঁচার শক্তি খুঁজে পান।