ওষুধ ছাড়াই কমবে কোলেস্টেরল! এই পানীয়গুলোই হতে পারে আপনার গোপন অস্ত্র জানুন

কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের মোমজাতীয় পদার্থ, যা আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের গঠন এবং হরমোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি দুই প্রকারের হয়ে থাকে। HDL (High-Density Lipoprotein), যা ‘ভালো কোলেস্টেরল’ নামে পরিচিত, কারণ এটি অতিরিক্ত কোলেস্টেরলকে লিভারে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। অন্যদিকে, LDL (Low-Density Lipoprotein) হলো ‘খারাপ কোলেস্টেরল’, যা ধমনীতে জমে গিয়ে ব্লকের সৃষ্টি করতে পারে এবং স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
HDL বাড়ানো এবং LDL কমানো মানে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখা। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পানীয়ের মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। দিল্লির হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনিরুদ্ধ শর্মাও বলেছেন, “কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খাবারের পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট পানীয়ও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ওট মিল্ক, গ্রিন টি, এবং সয়া ড্রিংকস প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে ভালো ফল মিলতে পারে।” নিচে কিছু খাদ্য ও পানীয়র বিষয়ে উল্লেখ করা হলো যা প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী পানীয়
- গ্রিন টি: ২০২০ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, গ্রিন টি-র উপাদান এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট (EGCG) কোলেস্টেরল হ্রাসে কার্যকর। গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাটেচিনস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট LDL এবং মোট কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। ব্ল্যাক টি-ও কোলেস্টেরলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- সয়া দুধ: সয়াতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বিকল্প হিসাবে সয়া দুধ বা সয়া পণ্য খেলে কোলেস্টেরল কমতে পারে। হার্ট ইউকে (Heart UK) প্রতিদিন ২-৩ বার সয়া-ভিত্তিক পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দেয়। এক গ্লাস সয়া দুধে (২৫০ মিলি) পর্যাপ্ত সয়া প্রোটিন থাকতে পারে।
- ওট ড্রিংকস: এক গ্লাস ওট দুধে ১ গ্রাম বিটা-গ্লুকান থাকতে পারে। এটি একধরনের দ্রবণীয় ফাইবার, যা পেটের ভিতরে জেল তৈরি করে এবং কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেমি-সলিড ওট খাবারের তুলনায় ওট মিল্ক কোলেস্টেরল কমাতে বেশি কার্যকর হতে পারে।
- টমেটো জুস: টমেটোতে থাকা লাইকোপিন নামক উপাদান রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। রস তৈরি করলে লাইকোপিনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ে। এতে থাকা ফাইবার ও নিয়াসিনও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লবণহীন টমেটো জুস খেলে LDL কোলেস্টেরল কমে।
- বেরি স্মুদি: বেরিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকে যা কোলেস্টেরল কমায়। বেরির মধ্যে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কম ক্যালোরি ও কম চর্বির জন্য বেরি স্মুদি একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। দুধ বা দই দিয়ে বেরি ব্লেন্ড করে নেওয়া যেতে পারে।
- স্টেরল ও স্ট্যানল যুক্ত পানীয়: স্টেরল ও স্ট্যানল হলো উদ্ভিজ্জ উপাদান যা কোলেস্টেরলের শোষণ রোধ করে। এদের পরিমাণ সবজিতে কম থাকলেও বিভিন্ন পানীয় যেমন দই, দুধ বা ফলের রসের সঙ্গে মেশানো হয়। প্রতিদিন ১.৫-২ গ্রাম গ্রহণের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমানো যেতে পারে।
- কোকো ড্রিংকস: কোকোতে থাকা ফ্ল্যাভানলস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং LDL কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তবে প্রসেসড চকলেট ড্রিংকে অতিরিক্ত চিনি, ফ্যাট ও লবণ থাকে, যা এড়িয়ে চলা ভালো।
- প্ল্যান্ট মিল্ক স্মুদি: সয়া বা ওট মিল্ক দিয়ে তৈরি স্মুদি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এই স্মুদিতে আপেল, বেরি, প্রুন, কমলা, অ্যাভোকাডো বা ব্রকলির মতো ফল ও সবজি মেশালে আরও উপকার পাওয়া যায়।
যা এড়িয়ে চলবেন
কোলেস্টেরল কমাতে চাইলে উচ্চ ফ্যাট ও চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন— আইসক্রিম, কোকোনাট মিল্ক ড্রিংক, ক্রিম দেওয়া কফি, কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি। এছাড়াও অতিরিক্ত অ্যালকোহল HDL কমিয়ে ও ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়িয়ে দেয়, তাই এটিও বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ আপনার জীবনধারায় কোলেস্টেরলের প্রভাব কমাতে পারে।