কিডনি রোগের যে সাধারণ লক্ষণগুলো ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই এড়িয়ে যান

কিডনি রোগের যে সাধারণ লক্ষণগুলো ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই এড়িয়ে যান

১. ক্লান্তি ও দুর্বলতা: ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কিডনি রোগের একটি প্রধান এবং প্রায়শই উপেক্ষা করা লক্ষণ হলো ক্রমাগত ক্লান্তি ও দুর্বলতা। যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করার ক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে রক্তে ইউরিয়ার মতো বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এই বিষাক্ত পদার্থগুলোই ক্লান্তি ও দুর্বলতার কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০% এরও বেশি ডায়াবেটিস রোগী যারা কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন, তারা এই লক্ষণকে সাধারণ স্ট্রেস বা অতিরিক্ত কাজের ক্লান্তি ভেবে উপেক্ষা করেন।

২. পা ও গোড়ালিতে ফোলাভাব: কিডনি রোগের কারণে শরীরে অতিরিক্ত তরল (ফ্লুইড) জমা হতে শুরু করে, যার ফলে পা, গোড়ালি এবং কখনও কখনও মুখেও ফোলাভাব (এডিমা) দেখা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই লক্ষণটি তখন দেখা যায়, যখন কিডনি রক্তে প্রোটিন (অ্যালবুমিন) ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, যার কারণে প্রোটিন প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। গবেষণা অনুযায়ী, এই লক্ষণটি মাঝারি থেকে গুরুতর কিডনি রোগে (স্টেজ ৩ বা ৪) সাধারণ, তবে এটিকে প্রায়শই সাধারণ ফোলা বা বার্ধক্যের প্রভাব মনে করা হয়।

৩. প্রস্রাবে পরিবর্তন: প্রস্রাবে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন কিডনি রোগের স্পষ্ট সংকেত হতে পারে। এর মধ্যে ফেনা-যুক্ত প্রস্রাব (প্রোটিনের আধিক্যের কারণে), বারবার প্রস্রাব আসা (বিশেষ করে রাতে), অথবা প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হওয়া অন্তর্ভুক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে মাইক্রোঅ্যালবুমিনুরিয়া (প্রস্রাবে অল্প পরিমাণে প্রোটিন) কিডনি রোগের সবচেয়ে প্রাথমিক লক্ষণ, যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমেই ধরা যায়। দুর্ভাগ্যবশত, ডায়াবেটিস রোগীরা এই লক্ষণকে সাধারণ মনে করে পরীক্ষা করাতে এড়িয়ে চলেন।

৪. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগ উভয়েরই একটি প্রধান কারণ এবং ফলাফল। ডায়াবেটিসের কারণে কিডনির ছোট রক্তনালীগুলো (গ্লোমেরুলি) ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের কারণ এবং ফলাফল উভয়ই হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপকে প্রায়শই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়, অথচ এটি কিডনির স্বাস্থ্যকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং এর কার্যকারিতা দ্রুত কমিয়ে দিতে পারে।

৫. ক্ষুধামন্দা ও বমি বমি ভাব: কিডনি রোগের কারণে রক্তে বর্জ্য পদার্থের মাত্রা বাড়লে ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব এবং কখনও কখনও বমি হওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণটি সাধারণত তখন দেখা যায়, যখন কিডনি রোগ কিছুটা উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে হালকা হতে পারে, যার কারণে সেগুলোকে প্রায়শই হজম সংক্রান্ত সমস্যা মনে করে উপেক্ষা করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *