স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত? গবেষণায় উঠে এল চমকপ্রদ সত্য

স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত? গবেষণায় উঠে এল চমকপ্রদ সত্য

‘পাখি, নদী আর বাতাসের ঝোড়ো বাতাস, কোনো সীমা তাদের আটকাতে পারে না…’ কিন্তু যখন ভালোবাসার কথা আসে, তখন সম্ভবত কোনো ধরনের সীমা বা বাধাবন্ধন মানুষ খেয়াল রাখে না।

আসলে ভালোবাসায় বয়স কোনো मायने রাখে না, কিন্তু যখন বিয়ের কথা আসে, তখন সমাজের অনেক নিয়ম এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান নিয়ে সবসময় আলোচনা হয়। আমাদের সমাজে সাধারণত বিশ্বাস করা হয় যে, স্বামীর বয়স স্ত্রীর চেয়ে বেশি হওয়া উচিত, কিন্তু সত্যিই কি এমনটা হওয়া জরুরি? নাকি এটি কেবল একটি পুরোনো ধারণা? আসুন জেনে নিই বিজ্ঞান ও সমাজ এই বিষয়ে কী বলে।

সমাজ কী বলে?
ভারতীয় সমাজে ৩ থেকে ৫ বছরের বয়সের ব্যবধান বিয়ের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়। একই সাথে এই সমীকরণে স্বামীর বয়স স্ত্রীর চেয়ে বেশি হয়। এই বিশ্বাসটি শত শত বছর ধরে চলে আসছে, বিশেষ করে সম্বন্ধ করে বিয়েতে (arranged marriage) এই বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। যদিও, এমন অনেক বিবাহও আছে যেখানে স্ত্রীর বয়স স্বামীর চেয়ে বেশি এবং সেগুলো সফলও হয়েছে। শাহিদ কাপুর (Shahid Kapoor) – মীরা রাজপুত (Mira Rajput), যাদের মধ্যে ১৫ বছরের বয়সের ব্যবধান রয়েছে এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়া (Priyanka Chopra) – নিক জোনাস (Nick Jonas), যেখানে প্রিয়াঙ্কা ১০ বছরের বড়, সহ এমন অনেক বিখ্যাত দম্পতি রয়েছেন যাদের মধ্যে বয়সের বড় ব্যবধান রয়েছে এবং তবুও এই দম্পতিরা সফল বিবাহ জীবন যাপন করছেন। আজকের দিনে প্রেমের বিবাহের (love marriage) প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে বয়সের এই ব্যবধানের খুব বেশি পরোয়া করা হয় না। বড় শহরগুলিতে তো এই ব্যবধান এখন আর কোনো मायने রাখে না। কিন্তু তবুও সমাজের একটি বড় অংশ এখনও এই ধারণাকে সঠিক বলে মনে করে।

যদি আপনি ভাবছেন যে এটি কেবল সমাজের তৈরি একটি নিয়ম, তাহলে তা নয়। বিজ্ঞানও এই বিষয়ে তার মতামত দেয়। বিজ্ঞান অনুসারে, বিবাহের জন্য শারীরিক এবং মানসিক পরিপক্কতা (maturity) উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ।

৩১ বছর বয়সী প্রাজক্তা কোহলিও (Prajakta Kohli) ৫ ফেব্রুয়ারি ৩৫ বছর বয়সী বৃশাঙ্ক কানালের (Vrishank Kanal) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

বিজ্ঞান কী বলে?
১. শারীরিক ও মানসিক পরিপক্কতা: মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় দ্রুত পরিপক্ক হয়।

মেয়েদের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তন ৭ থেকে ১৩ বছর বয়সে শুরু হয়, যেখানে ছেলেদের মধ্যে এই পরিবর্তন ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সে আসে।
তাই মহিলাদের মানসিক বোঝাপড়া এবং আবেগগত স্থিতিশীলতা পুরুষদের তুলনায় আগে বিকশিত হয়।
২. বিয়ের জন্য সঠিক বয়স: ভারতে মেয়েদের বিয়ের আইনি বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর। আইনত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ৩ বছরের ব্যবধান সঠিক বলে মনে করা হয়েছে।

বিজ্ঞান এই তথ্য কেবল শারীরিক পরিপক্কতার উপর কথা বলে। তবে হরমোনের পরিবর্তন হলেই বিয়ে করে দেওয়া উচিত, এমনটা জরুরি নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শারীরিক সম্পর্ক এবং বিবাহের জন্য সর্বনিম্ন বয়স ভিন্ন ভিন্ন। এছাড়াও, বিয়ে শুধু শারীরিক সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল নয়। এই কারণেই শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড দিয়ে বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা যায় না। সমাজের মতে, একটি উপযুক্ত বয়সের ব্যবধান সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়। অন্যদিকে বিজ্ঞান অনুসারে, সঠিক বয়সের ব্যবধান নির্ভর করে যে, উভয় সঙ্গী মানসিক, আবেগগত এবং শারীরিকভাবে কতটা পরিপক্ক।

তবে এই কথা স্পষ্ট যে, কোনো বিবাহের সাফল্য বয়সের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে না, বরং একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান এবং বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। বয়সের ব্যবধান তিন বছর হোক বা পনেরো, প্রকৃত অর্থে সফল সম্পর্কগুলো সেগুলোই যেখানে উভয় সঙ্গী একে অপরের পরিপক্কতা এবং চিন্তাভাবনাকে বোঝে এবং একে অপরকে সমর্থন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *