গরমকালে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে চান? কাজে আসবে এই ১০টি ঘরোয়া উপায়!

গরমকালে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে চান? কাজে আসবে এই ১০টি ঘরোয়া উপায়!

গরম এবং আর্দ্রতার কারণে ত্বকে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি দেখা যায়, যাকে ঘামাচি বা হিট র‍্যাশ বলা হয়। এই ফুসকুড়িগুলির কারণে চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া হয়। আসুন, জেনে নিই কোন ঘরোয়া প্রতিকারগুলির মাধ্যমে এই ঘামাচি দূর করা যায়?

ঘামাচি কী এবং কেন হয়?

ঘামাচিকে ডাক্তারি পরিভাষায় মিলিয়ারিয়া (Miliaria) বলে। আসলে, ত্বকের ঘাম গ্রন্থিগুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং ঘাম ত্বকের নিচে আটকে পড়ে। এর ফলে ত্বকে ছোট ছোট লাল বা গোলাপী ফুসকুড়ি দেখা যায়, যেগুলিতে খুব চুলকানি হয়। এই সমস্যা বিশেষত গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশি হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঘামাচি হওয়ার কারণ শুধু গরম এবং ঘাম নয়, বরং ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং মৃত কোষ জমা হওয়ার কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

ঘামাচি হওয়ার প্রধান কারণ

  • তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা: উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে ঘাম গ্রন্থিগুলিতে বাধা সৃষ্টি হয়।
  • অতিরিক্ত ঘাম: অতিরিক্ত ঘামের কারণেও ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • টাইট পোশাক: সিনথেটিক বা আঁটসাঁট পোশাক ত্বককে শ্বাস নিতে বাধা দেয়, যার ফলে ঘামাচি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • মৃত ত্বকের কোষ এবং ব্যাকটেরিয়া: এগুলি ঘাম গ্রন্থিগুলিকে বন্ধ করে দিতে পারে।

ঘামাচির লক্ষণ

  • ত্বকে ছোট লাল বা গোলাপী ফুসকুড়ি
  • চুলকানি এবং কাঁটা কাঁটা অনুভূতি
  • আক্রান্ত স্থানে জ্বালাপোড়া
  • ফুসকুড়িতে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি
  • গুরুতর ক্ষেত্রে ফুসকুড়ি থেকে জল বা পুঁজ বের হওয়া

এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আপনাকে আরাম দিতে পারে

  1. বরফের সেঁক: বরফ ত্বককে তাৎক্ষণিকভাবে শীতল করে এবং চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমায়। একটি পরিষ্কার কাপড়ে ২-৩ টুকরা বরফ মুড়িয়ে আক্রান্ত স্থানে ৫ থেকে ১০ মিনিট হালকা হাতে ঘষুন। দিনে ৪-৫ বার এটি করলে ঘামাচি কমতে পারে। ICMR বরফের সেঁককে ত্বকের তাপমাত্রা কমানোর দ্রুততম উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছে।
  2. অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরায় শীতলতা এবং ত্বককে আর্দ্রতা দেওয়ার গুণ রয়েছে। তাজা অ্যালোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুধু ঘামাচি কমায় না, ত্বককে নরমও করে।
  3. নিম পাতা: নিমে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে, যা ঘামাচি থেকে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ১৫-২০টি নিম পাতা আধা লিটার জলে ফুটিয়ে নিন। এই জল ঠান্ডা করে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে নিন অথবা পাতাগুলির পেস্ট তৈরি করে লাগান।
  4. চন্দনের পেস্ট: চন্দন গুঁড়ো গোলাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং ঘামাচির উপর লাগান। চন্দন ত্বককে শীতল করে এবং জ্বালাপোড়া কমায়। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতি গরমে ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  5. মুলতানি মাটি: মুলতানি মাটি গোলাপ জল বা ঠান্ডা জলের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং আক্রান্ত স্থানে লাগান। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের তাপ শোষণ করে এবং ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে।
  6. ক্যালামাইন লোশন: ক্যালামাইন লোশনে জিঙ্ক অক্সাইড থাকে, যা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি কমায়। এটি দিনে ২-৩ বার আক্রান্ত স্থানে লাগানো যেতে পারে।
  7. ওটমিল বাথ: হালকা গরম জলে এক কাপ ওটমিল ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, তারপর এই জল দিয়ে স্নান করুন। ওটমিল ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায় এবং সংক্রমণ হ্রাস করে।
  8. নারকেল তেল এবং কর্পূর: এক চামচ নারকেল তেলে সামান্য কর্পূর মিশিয়ে হালকা গরম করুন। ঠান্ডা হওয়ার পর এটি ঘামাচির উপর লাগান। এটি ত্বককে শীতলতা দেয় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
  9. তরমুজের শাঁস: তরমুজের শাঁস ১৫-২০ মিনিট ঘামাচির উপর লাগিয়ে তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি শরীরের তাপ কমায় এবং ত্বককে আরাম দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *