এসিতে ঘুমানোর অভ্যাস ডেকে আনতে পারে বিপদ! চিকিৎসকরা জানালেন ভয়ঙ্কর সত্য

গরমকাল আসলেই সবাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (AC)-এর ঠান্ডা হাওয়ায় স্বস্তি খোঁজেন। সারাদিনের ব্যস্ততা এবং ভ্যাপসা গরমের পর রাতে এসির ঠান্ডা ঘরে ঘুমানোর আরামই আলাদা। কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই আরামদায়ক ঠান্ডা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যার কারণও হতে পারে? যদি আপনি রাতভর এসিতে ঘুমান, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এসির ঠান্ডা বাতাস কীভাবে আপনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে এবং তা থেকে বাঁচতে কী করবেন।
এসির ঠান্ডা এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব
এয়ার কন্ডিশনারের ঠান্ডা বাতাস তাৎক্ষণিক আরাম দিলেও, এটি নীরবে আপনার শরীরকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় মানুষ এসি ঘরে থাকার পর শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা বা হালকা জ্বরের অভিযোগ করেন। এর কারণ হলো ঘরে আর্দ্রতার অভাব এবং তাপমাত্রার ভারসাম্যহীনতা। এসি বাতাস থেকে আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, যার ফলে ঘরের পরিবেশ শুষ্ক হয়ে যায়। এতে আপনার ত্বক শুষ্ক হতে পারে, ঠোঁট ফাটতে পারে এবং শ্বাসতন্ত্রের ওপরও খারাপ প্রভাব পড়ে। এছাড়াও, শরীরে জলের অভাব (ডিহাইড্রেশন) হলে সর্দি-কাশি বা জ্বরের মতো সমস্যা হতে পারে।
কেন এসি রোগের কারণ হয়?
যখন আপনি দীর্ঘক্ষণ এসিতে থাকেন, তখন এটি আপনার শরীরের প্রাকৃতিক তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে। এসি ঘরের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, যার ফলে আপনার ত্বক এবং শ্বাসতন্ত্র শুষ্ক হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি গলা ব্যথা, নাক বন্ধ হওয়া এবং সাইনাসের মতো সমস্যার জন্ম দিতে পারে। এছাড়াও, এসির ঠান্ডা বাতাস এবং বাইরের গরম বাতাসের মধ্যে বারবার যাওয়া-আসা করার ফলে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার কারণে সর্দি বা জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের এই সমস্যাগুলির ঝুঁকি বেশি থাকে।
সুস্থ থাকার জন্য সহজ উপায়
এসির ব্যবহার করা ভুল নয়, তবে কিছু ছোট সতর্কতা আপনাকে এর কারণে সৃষ্ট ঝামেলা থেকে বাঁচাতে পারে। আসুন জেনে নিই কিছু সহজ এবং কার্যকর উপায়:
১. ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখুন: এসি চালানোর সময় ঘরে একটি বাটিতে জল রাখুন। এটি আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায়। আপনি চাইলে হিউমিডিফায়ারও ব্যবহার করতে পারেন, যা ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখে।
২. পাখা ব্যবহার করুন: এসির পাশাপাশি সিলিং ফ্যান চালাতে ভুলবেন না। এসি থেকে নিচের বাতাস ঠান্ডা এবং উপরের বাতাস গরম হয়ে যায়, যার ফলে ঘরে তাপমাত্রার ভারসাম্যহীনতা হতে পারে। পাখা বাতাসকে পুরো ঘরে সমানভাবে ছড়িয়ে দেয় এবং আপনাকে আরও আরাম দেয়।
৩. সময় সময় এসি বন্ধ করুন: একটানা এসি চালানো এড়িয়ে চলুন। প্রতি কয়েক ঘণ্টা পর পর এটিকে বন্ধ করে ঘরকে তাজা বাতাস নিতে দিন। এতে ঘরে অক্সিজেনের মাত্রা বজায় থাকে এবং আপনার স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে না।
৪. প্রচুর জল পান করুন: এসির ঠান্ডা বাতাস আপনার শরীর থেকে জল শোষণ করতে পারে, যার ফলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি থাকে। তাই সারাদিন প্রচুর জল পান করুন এবং আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন।
এসির সঠিক ব্যবহার জরুরি:
এয়ার কন্ডিশনার গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি চমৎকার উপায়, তবে এর সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাপমাত্রা সবসময় ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখুন, কারণ এর চেয়ে বেশি ঠান্ডা তাপমাত্রা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এছাড়াও, এসির নিয়মিত সার্ভিসিং করান যাতে তাতে জমা ধুলো এবং ব্যাকটেরিয়া আপনার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত না করে।