প্রতি বছর প্রায় ১.৭৫ লক্ষ মানুষের কিডনি ক্যান্সারে মৃত্যু, এই অভ্যাসগুলিই সবচেয়ে বড় কারণ

ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের কারণে প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এই রোগের কারণে স্বাস্থ্যসেবার উপর অতিরিক্ত বোঝাও বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। কিডনিতে ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা গত কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিডনি ক্যান্সার, বিশেষ করে রেনাল সেল কার্সিনোমা, বিশ্বজুড়ে ১৩তম সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। এটি সমস্ত নতুন ক্যান্সার মামলার প্রায় ২.৪%। বিশ্বব্যাপী, প্রতি বছর কিডনি ক্যান্সারের ৪ লক্ষেরও বেশি নতুন ঘটনা সামনে আসে এবং ১.৭৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমা দেশগুলিতে, বিশেষ করে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং জাপানে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব কিডনি ক্যান্সার দিবস এবং ঝুঁকির কারণগুলি
কিডনি ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি, রোগীদের যত্ন এবং এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি ক্যান্সার দিবস (World Kidney Cancer Day) পালন করা হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের কিছু ভুল অভ্যাস এবং অবহেলার কারণে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়েছে, যা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
কিডনি ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান ঘটনা সম্পর্কে জানুন:
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান যে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতোই কিডনিতেও ক্যান্সার হতে পারে। কিডনির কোষগুলির অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ক্যান্সারের রূপ নেয়, যা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। রেনাল সেল কার্সিনোমা কিডনি ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ প্রকার, তবে ছোট শিশুদের মধ্যে উইলমস টিউমার (Wilms tumor) নামক কিডনি ক্যান্সার বিকাশের সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রতি বছর কিডনি ক্যান্সারের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর একটি কারণ হলো আগের চেয়ে কার্যকর পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি।
কেন হয় এই ক্যান্সার? কোন অভ্যাসগুলি দায়ী?
কিডনিতে ক্যান্সার কেন হয় তা এখনও খুব স্পষ্ট নয়। সাধারণত কিডনি ক্যান্সার তখন হয় যখন কিডনির কোষগুলির ডিএনএতে পরিবর্তন হয়। এর জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। কিছু মানুষের মধ্যে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়, যা নিয়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা জানান, বয়সের সঙ্গে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, ধূমপায়ীদের কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপের মতো পরিস্থিতি এবং কিছু বংশগত অবস্থাও কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি বাবা-মা বা ভাই-বোনের মতো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আগে থেকেই কারো এই রোগ থাকে, তাহলে অন্যদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
সময় মতো সনাক্তকরণে প্রাণ বাঁচতে পারে
চিকিৎসকরা বলেন, ক্যান্সারের ঘটনা যদি সময় মতো ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসা এবং প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই কিডনির স্বাস্থ্য এবং শরীরে হওয়া পরিবর্তনগুলির প্রতি মনোযোগ রাখা জরুরি। কিডনি ক্যান্সারের লক্ষণগুলি সাধারণত প্রাথমিকভাবে খুব স্পষ্ট হয় না এবং সময়ের সাথে বিকশিত হয়। যদি প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসে বা এর রঙ প্রায়শই গোলাপী, লাল বা কোলার মতো হয় তবে এটিকে উপেক্ষা করবেন না। এই সমস্যাগুলির সাথে ক্ষুধামন্দা, পিঠ বা পাশে ব্যথা, ক্লান্তি এবং কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাসও অ্যালার্মিং বলে মনে করা হয়।
এই ক্যান্সার থেকে কীভাবে বাঁচবেন?
চিকিৎসকরা বলেন, যদিও কিডনি ক্যান্সার প্রতিরোধের কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই, তবে কিছু ব্যবস্থার সাহায্যে আপনি আপনার ঝুঁকি কমাতে পারেন।
প্রথমত, অ্যালকোহল এবং ধূমপান ছেড়ে দিন, এই দুটির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপদ থাকে।
আহারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। ফল এবং সবজি প্রচুর পরিমাণে খান। ভিটামিন এবং পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর খাবার বেশি করে গ্রহণ করুন।
নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। ব্যায়াম না করলে ওজন বাড়ে যা অনেক রোগের প্রধান কারণ।
কিডনি সম্পর্কিত সমস্যা থেকে বাঁচতে রক্তচাপ এবং সুগার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।