আপনার নিঃশ্বাসেও কি দুর্গন্ধ? এই উপায়গুলো সহজেই দূর করবে সমস্যা!

নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ (হ্যালিসটোসিস) একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিরক্ত করে। অনেক সময় এই সমস্যা লজ্জা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যাকে উপেক্ষা করা স্বাস্থ্যের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের কারণ এবং লক্ষণ
দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যার বেশিরভাগই মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। ল্যান্সেট গ্লোবাল হেলথ (২০২৫)-এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৩১.৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময় এই সমস্যায় ভোগেন। এর কারণ হলো খারাপ মৌখিক পরিচ্ছন্নতা, জিভে ব্যাকটেরিয়ার জমে থাকা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। রসুন, পেঁয়াজ এবং মশলাদার খাবারও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। যখন এই সমস্যা ক্রমাগত বজায় থাকে, তখন এটি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ যেমন পায়োরিয়া, অথবা ডায়াবেটিস এবং হজমের সমস্যার মতো অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। দিল্লির ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ডেন্টিস্ট ড. রজত শর্মা বলেন, দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো জিভ এবং দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার জমে থাকা। মৌখিক পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ না দিলে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মুখ থেকে খারাপ গন্ধ আসা, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ বা অন্যদের সাথে কথা বলার সময় অস্বস্তি। জার্নাল অফ ওরাল হেলথ (২০২৪) অনুসারে, যদি এই সমস্যা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তবে এটি মাড়ির রোগ, সাইনাস সংক্রমণ বা পেটের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মানুষ নিজেই তাদের নিঃশ্বাসের গন্ধ বুঝতে পারেন না। পরিবার বা বন্ধুদের অভিযোগ থেকে তারা এ সম্পর্কে জানতে পারেন। মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জন ড. অনিতা মেহতার মতে, যদি নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের পাশাপাশি মুখে শুষ্কতা, দাঁতে ব্যথা বা গলা ব্যথা হয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
মৌখিক পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দিন: দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাসের সমস্যা দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সঠিক মৌখিক পরিচ্ছন্নতা। দিনে দু’বার দু’মিনিট ধরে ব্রাশ করা, ফ্লসিং করা এবং জিভ পরিষ্কার করা জরুরি। জিভে ব্যাকটেরিয়ার জমে থাকা ৮০% নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের কারণ হয়, তাই জিভ স্ক্র্যাপার ব্যবহার করা উচিত। অ্যালকোহল-মুক্ত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ ব্যবহারও ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে। ব্রাশ করার পর জিভ পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। মাউথওয়াশ দিনে একবার ব্যবহার করুন, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না।
আর্দ্রতা এবং শুষ্ক মুখ থেকে সুরক্ষা: শুষ্ক মুখের কারণে ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের কারণ হয়। দিনে ৮-১০ গ্লাস জল পান করা এবং চিনি-মুক্ত চুইংগাম চিবানো লালা উৎপাদন বাড়ায়, যা মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। জার্নাল অফ ডেন্টাল রিসার্চ (২০২৪) অনুসারে, আর্দ্রতার অভাবে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: রসুন, পেঁয়াজ এবং মশলাদার খাবারের কারণে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ বাড়তে পারে। নিউট্রিশন জার্নাল (২০২৪) অনুসারে, বেশি চিনিযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে মুখে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, আপেল, গাজর এবং সবুজ শাকসবজি চিবোলে মুখের প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতা হয় এবং নিঃশ্বাস সতেজ থাকে।
তামাক এবং অ্যালকোহল পরিহার: তামাক এবং অ্যালকোহল সেবন করলে মুখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে, যার ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (২০২৫) অনুসারে, ধূমপায়ীদের মধ্যে মাড়ির রোগ এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যা ৫০ শতাংশ বেশি হয়।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি আপনি মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং ঘরোয়া উপায়ে কোনো লাভ না হয়, তাহলে ডেন্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। গভীর পরিষ্কার (স্কেলিং) বা মাড়ির রোগের চিকিৎসা জরুরি হতে পারে।