যাকে বিষ ভাবা হয়, সেটাই আসলে অমৃত! জেনে নিন আক পাতার ৯টি অবিশ্বাস্য উপকারিতা, যা ডাক্তাররাও হয়তো আপনাকে বলবেন না

যাকে বিষ ভাবা হয়, সেটাই আসলে অমৃত! জেনে নিন আক পাতার ৯টি অবিশ্বাস্য উপকারিতা, যা ডাক্তাররাও হয়তো আপনাকে বলবেন না

আক গাছ, যা সাধারণত সব জায়গাতেই দেখতে পাওয়া যায়, তার ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে খুব কম লোকই জানেন। এই গাছ শুষ্ক, অনুর্বর এবং উঁচু জমিতে প্রায় সর্বত্রই জন্মে। প্রচলিত ধারণা হলো, আক একটি বিষাক্ত গাছ এবং মানুষের জন্য এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। এর মধ্যে কিছুটা সত্যতাও রয়েছে, কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এটিকে উপবিষের তালিকায় রাখা হয়েছে। যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা হয়, তাহলে বমি ও ডায়রিয়ার কারণে বিপদ হতে পারে।

তবে, সঠিক পরিমাণে, সঠিক পদ্ধতিতে এবং অভিজ্ঞ বৈদ্যের তত্ত্বাবধানে আক সেবন করলে এটি অনেক রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। এর প্রতিটি অংশই ওষুধস্বরূপ, প্রতিটি অংশই উপকারী। এটি সূর্যের মতো তীব্র, পারদের মতো উজ্জ্বল এবং উপকারী, পাশাপাশি দিব্য রাসায়নিক গুণে সমৃদ্ধ।

আকের উপকারিতা ও ব্যবহার
আকের রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এর শিকড় ও কাণ্ডে এমিরিন, গিগান্টিওল এবং ক্যালোট্রোপিওল ছাড়াও সামান্য পরিমাণে মাদার আলবান এবং স্থিতিস্থাপক ক্ষার পাওয়া যায়। এর দুধে ট্রিপসিন, ইউকেরিন, ক্যালোট্রোপিন এবং ক্যালোটক্সিন উপাদান থাকে। আকের রস তেতো, তীব্র, প্রকৃতিতে উষ্ণ, বাত-কফ, কানের ব্যথা, কৃমি, পাইলস, কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের রোগ, ত্বকের রোগ, বাত এবং ফোলা কমাতে সহায়ক। একে কোথাও কোথাও ‘উদ্ভিজ্জ পারদ’ও বলা হয়।

এর ৯টি অবিশ্বাস্য ঔষধি গুণ
১. ডায়াবেটিস ও পেটের মেদ কমাতে: আক গাছের পাতা উল্টো করে (পাতার খসখসে অংশ) পায়ের তলায় রেখে মোজা পরুন। এটি সকালে পরুন এবং সারাদিন রেখে রাতে ঘুমানোর সময় খুলে ফেলুন। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার সুগার লেভেল স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং পেটের ফোলা বা মেদ কমে যাবে।

২. ক্ষত নিরাময়: আকের নরম পাতা মিষ্টি তেলে জ্বালিয়ে ফোলা অণ্ডকোষে বাঁধলে ফোলা কমে যায়। একইভাবে, কটু তেলে পাতা জ্বালিয়ে গরম ক্ষতের উপর লাগালে ক্ষত সেরে যায়।

৩. কাশি: আকের নরম পাতার ধোঁয়া পাইলস সারাতে সাহায্য করে। আকের পাতা গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বাঁধলে আঘাত এবং ফোলা সেরে যায়। আকের শিকড়ের গুঁড়োর সাথে গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে ছোট ছোট গুলি তৈরি করে খেলে কাশি সেরে যায়।

৪. মাথা ব্যথা: আকের শিকড়ের ছাইয়ের সাথে কটু তেল মিশিয়ে লাগালে চুলকানি সেরে যায়। আকের শুকনো ডাল একপাশ থেকে জ্বালিয়ে অন্য পাশ থেকে তার ধোঁয়া জোরে নাক দিয়ে টানলে মাথা ব্যথা তাৎক্ষণিকভাবে কমে যায়।

৫. সর্দি ও জ্বর: আকের শিকড় জলে ঘষে লাগালে নখকুনি রোগ সেরে যায়। আকের শিকড় ছায়ায় শুকিয়ে গুঁড়ো করে গুড়ের সাথে খেলে সর্দি ও জ্বর সেরে যায়।

৬. বাত (আর্থ্রাইটিস): ২ সের আকের শিকড় ৪ সের জলে সেদ্ধ করুন। জল অর্ধেক হয়ে গেলে শিকড় তুলে নিন এবং ২ সের গম সেই জলে রাখুন। জল শুকিয়ে গেলে গম শুকিয়ে আটা তৈরি করুন। এই আটার এক চতুর্থাংশ দিয়ে রুটি বা ভাজা তৈরি করে তাতে গুড় ও ঘি মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে বাত রোগ সেরে যায়। বহু পুরনো বাত রোগ ২১ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে।

৭. পাইলস: আকের দুধ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে লাগালে চোখের ব্যথা কমে যায়। পাইলসের অর্বুদের উপর লাগালে ব্যথা দূর হয়। বোলতার কামড়ে লাগালে ব্যথা হয় না। ক্ষতের উপর লাগালে ক্ষত সেরে যায়।

৮. চুল পড়া: যেখানে চুল পড়ে গেছে, সেখানে আকের দুধ লাগালে চুল পুনরায় গজাতে শুরু করে। তবে বিশেষ সতর্কতা: খেয়াল রাখবেন যেন আকের দুধ চোখে না যায়, অন্যথায় চোখের ক্ষতি হতে পারে।

৯. কান ব্যথা: আকের রস তেতো, তীব্র, প্রকৃতিতে উষ্ণ, বাত-কফ, কানের ব্যথা, কৃমি, পাইলস, কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের রোগ, ত্বকের রোগ, এবং ফোলা কমাতে সহায়ক।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: উপরে উল্লিখিত যেকোনো প্রতিকার ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিজের ঝুঁকিতে কোনো কিছু প্রয়োগ করবেন না, বিশেষত যেখানে আকের বিষাক্ত অংশের ব্যবহার জড়িত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *